Posts

Showing posts from December, 2017

আমাদের স্বস্তি দিন

সকালে রিক্সায় চড়ে অফিসে যাচ্ছি, কিছুদুর যেতেই রিক্সা থেমে গেলো, তাকিয়ে দেখি বিশাল জ্যাম। অপেক্ষার পর অপেক্ষা করেও চাকা ঘুরার নাম নেই। অফিসে সময় বয়ে যাচ্ছে অগত্যা বাধ্য হয়ে রিক্সা ভাড়া পঞ্চাশ টাকা দিয়ে হাঁটা দিলাম... হাঁটতে হাঁটতে শুনলাম, প্রধানমন্ত্রী গেছে, সেই কারনে এত্ত জ্যাম। এমনিতেই প্রতিদিন দূর্বিষহ জ্যাম থাকে আর যেদিন কোন ভিআইপি যান, সেদিনে কথা কি বলব... মাননীয় ভিআইপিগণ, আপনারা আমাদের রক্ত-ঘামের টাকায় ভিআইপি ভাবে চলাফেরা করেন। করুন, আপত্তি নাই। আপত্তি সেখানেই, আপনাদের আ রাম আয়েশ এত কম দেখে। আপনাদের সড়ক পথে না আকাশ পথ দিয়ে চলাচল করা উচিত! তাতে আপনাদের আর একটু আয়েশ হয় আমরা একটু স্বস্তি পায়। এর জন্য আবগাবী সূল্ক করের মত খাত বের করুন। প্রয়োজনে হাঁড়ির চালের ট্যাক্স বসান। আমরা প্রতিদিন একমুটো চাল তুলে রাখবো আপনাদের জন্য... আপনারা উড়াল পথে চলুন আমাদের স্বস্তি দিন.....

ভাত দে হারামজাদী

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ইশতিহারে কেজি প্রতি চালের দাম ১০ টাকা ছিল। বাজারে চাউলের দাম এখন কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। দেশের হারামখোর ও হারামির বাচ্চাদের জন্য এই দাম মামুলী ব্যপার হতে পারে কিন্তু হালাল পথে উপার্জন কারীদের জন্য এই দাম শরীর থেকে চামড়া খুলে নেওয়ার সমান। ১৯৭২ সালে সেই সময়ের সাহসী কবি রফিক আজাদ লিখেছিল, "ভাত দে হারামজাদা,,, না হলে মানচিত্র খাবো"! আজ তিনি বেঁচে থাকলে হয়ত লিখতেন, "ভাত দে হারামজাদী,,, না হয় উন্নয়ন খাবো"!!

নুডুলসের খিচুড়ি

সকালে পাউরুটি দিয়ে নাস্তা করার পর গিন্নী বলল, - দুপুরে কি খাবে? বললাম, চালের যে দাম ভাত আর খাবো না ভাবছি... -তাহলে খাবে কি? বললাম, নুডুলসের খিচুড়ি!!

ভ্যান রাখার যাদুঘর

অফিসের বিশেষ কাজে ধানমন্ডি-২ এর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেডের প্রধান শাখায় গেছিলাম। শ্যামলী থেকে বেশি দূরে নয় কিন্তু যানজটের কারণে সময় এতটাই লেগে যায় যে, এই সময়ের মধ্যে চাঁদে গিয়ে ফিরে আসা যাবে। তো  যানজটের সমুদ্র পাড়ি দিয়ে অবশেষে পৌছালাম।  কাজ সেরে ফেরার পথে সাইন্সল্যাবটরীর মোড়ে এসে দাঁড়ায় বাসের জন্য। এখানে এসে পুরাই থ' মেরে গেলাম।একটা বাসও নেই, রাস্তা পুরা ফাঁকা। আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি, আমার সাথে অনেক আম-পাব্লিকও দাঁড়িয়ে আছে বাসের অপেক্ষায়। আমাদের দাঁড় করিয়ে রেখে, প্রায়ই আধা ঘন্টা পর হুইসেল বাঁজিয়ে কোন এক মন্ত্রীমহোদয় চলে যান।  ভাগ্যিস, সেদিন প্রধানমন্ত্রী বা উজিরে খামখা রাষ্ট্রপতি যাননি। তাহলে রাস্তায় দাঁড়ানো সুযোগও থাকত না, খেদিয়ে সবাইকে কোন এক মাইনকা চিপায় দাঁড় করে রাখত ঘন্টা পর ঘন্টা। মন্ত্রী সাহেব যাওয়ার পর, বানের পানির মত আটকে থাকা বাস গুলো আসতে শুরু করে। সবাই বাসে উঠার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করে দিলো। আমি প্রচন্ড ভিড় ঠেলে উঠলাম একটি লোকাল বাসে। বাসে যাত্রীর ভিড়ে কোনমতে ইঞ্জিল কভারে একটু বসার সুযোগ পেলাম। একটু আয়েশ করে মোবাইল বের করে ক্যান...

এ তালা ভাঙবো কেমন করে

Image
ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় প্রায়শই আমার ভুল হয়। বাড়ি আসার সময় দরকারি কোন না কোন কিছু ফেলে আসি। যেহেতু এবার আগেই আমার ফ্যামিলিকে গ্রামের বাড়িতে রেখে এসেছি, তাই ভুলে সম্ভাবনা ৯৯ পার্সেন্ট মাথায় রেখে রাতেই সব গোছগাছ করেছি। সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে সব প্রয়োজনীয় জিনিষ বিছানার উপর রেখে, তারপর ব্যাগে ভরেছি। যাতে ভুল করে কিছু ফেলে রেখে না যায়।   রুম থেকে বের হওয়ার আগেও দুই মিনিট ভেবেছি, কিছু ফেলে যাচ্ছি কিনা। সবঠিক আছে, নিশ্চিত হয়ে রুম থেকে বের হলাম। তারপর রুমে তালা দিয়ে ড্রইংরুম ভিতর থেকে লক করে বের হয়েছি। সিড়ি ভেঙ্গে নিচে নেমে কেচিগেট খুলতে গিয়েই বিপত্তি টের পেলাম। 'ফুল' মানে বোকা বনে চলে গেলাম। বেশি কেয়ারফুলে যা হয়, তাই হয়েছে। রুমের ভিতর চাবির  গাট্টি রেখে তালা দিয়ে বের হয়ে এসেছি।  এবার পড়ে গেলাম মহাবিপদে। কেচিগেট খুলে বের হতে পারছি না আবার ফিরে গিয়ে রুমে ঢুকবো, সেটাও পারছি না। সাতসকালে, নিচতলার দরজায় নক করে কোন সাড়া শব্দ পেলাম না। অগত্যা অপেক্ষা থাকলাম, কখন কে বাহিরে বের হয়? তখন বের হবো। তখনই মনে পড়ে গেল, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের সেই বিখ্যাত ...

নৌকায় ভরসা রাখুন

সকালে ঘুম থেকে উঠে বাথরুম গিয়ে আওয়াজ দিলাম, 'বউ, ও বউ' আওয়াজ শুনে বউ ক্যাট ক্যাট করে বলল, তোমার মাথা মুতা কি খারাপ হইসে? বাথরুম থেকে কতা কও! গলারস্বর একটু নামিয়ে প্রায় ফিসফিস করে বললাম, 'মাথা ঠিকই আছে, বাথরুমে পানি নাই' মোটর চালু করতে বল। বউ এমনিতেই গরমে অস্থির, শুনে আরো গরম হয়ে বলল, 'মোটর চালু করবে ক্যামনে? কারেন্ট নাই! টিস্যু দিয়া কাম চালাও'  আমি নরম হয়ে বললাম, 'টিস্যুও তো নাই' বউ এবার গরমে চরম পর্যায়ে বলল, 'তোমারে না গতকালই কইলাম টয়লেট পেপার নাই' আমি পরম মমতায় বললাম, এইটা ঝগড়া করার টাইম না বউ, ঘরে পুরানা পত্রিকা আছে কিনা দেখো... একটু পরে বাথরুমের দরজার নীচের ফাঁক দিয়ে বউ পুরানো একটা পত্রিকা দিল। পত্রিকাখানা হাতে নিয়ে দেখি, প্রধানমন্ত্রীর জনসমাবেশের ছবি। তাতে হেডিং ছিল 'নৌকায় ভরসা রাখুন' আমি পত্রিকা দিয়ে কাম সারতে সারতে আপন মনে বললাম, "হুম নৌকাই ভরসা"!!

শব্দের জাদুঘর

আমার ছেলে সবেমাত্র পৃথিবীকে একটু একটু করে চিনতে শুরু করেছে। এখনো মুখের ভাষা ফোঁটেনি। দেয়ালে টিকটিকি দেখলে অথবা কোথাও তেলাপোকা মরে পড়ে থাকলে, তা দেখে হুঁউ-হুঁউ-হুঁউ শব্দ করে আমাকে তর্জনী আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখানোর চেষ্টা করে। আমার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ নুর হোসেন দিবসে জাদুঘরে ঘুরতে গেলাম। ফাটাকেষ্ট ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেল, 'গণ-অভ্যুত্থান' শব্দটি প্রধানমন্ত্রী জাদুঘরে পাঠিয়েছেন। উনার কথাটি শুনে এটা দেখতে খুবই ইচ্ছে হলো। 'গণ-অভ্যুত্থান' শব্দটা সত্যিই যাদুঘরে আছে কিনা। আমরা জাদুঘরে ঢুকেই এদিক সেদিক ঘুরতে লাগলাম। প্রথমে দেখতে পেলাম,  প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ভ্যানটি। এক কোনায় অনেক যত্ন সহকারে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তার পাশে চোঁখ পড়তেই অবাক হয়ে গেলাম! একটা সুন্দর সেল্ফে সাজিয়ে রাখা জনগনের কাঙ্ক্ষিত শব্দ  'গণ-অভ্যুত্থান'।  তারমানে কাদের সাহেব মিথ্যে বলেনি। চমক তখনও বাকি! আমি অবাক হয়ে গেলাম, গণ-অভ্যুত্থান শব্দটার পাশে নিদারুণ অবহেলায় 'বাক স্বাধীনতা' পড়ে আছে। একটু  এগিয়ে গিয়ে বামদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি  'আইনের শাসন'। অযত্নে জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়...

ব্লুহোয়েল: একটি মৃত্যুইচ্ছার গল্প

Image
সাতসকালে ঘুম থেকে উঠে ছাদে গেছি হাঁটাহাঁটি করতে। দেখি, পাশের ছাদের একটি লোক বোতল হাতে ছাদের রেলিংএর উপর উঠছে। কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,  -:ভাই কি করেন?  লোকটি আমার কথায় এক বিদায়ী ভাষণ দিয়ে বলল,  -:ভাই, সারারাত ব্লুহোয়েল গেম খেলে ৫০স্টেপে এসেছি। এখন আত্মহত্যা করবো :-ও আচ্ছা করুন। তা হাতে ওটা কি? :-পেট্রোল :-পেট্রোল কেন? :-পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে মরতে চাই :-মানে? :-গায়ে পেট্রোল ঢেলে, তারপর এখান ঝাপ দিবো    একথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, :-ভাইরে, নিশ্চিত হওয়ার দিন আর নাই। সময় এখন বড়ই অনিশ্চিত। :-কী বলছেন এসব!!  :- ধরুন, আপনি ঝাঁপ দিলেন কিন্তু মাটিতে পড়লেন না, কার্নিশে কিংবা ক্যাবল তারে আটকে ঝুলে রইলেন। ব্যাপারটা কেমন হবে। পেট্রোল রাখার দায়ে, ফাঁকতালে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাবে। কি বিশ্রী ব্যপার হবে। একবার ভাবুন?    :-তাহলে, ইঁদুর মারার বিষ খাবো নাকি? :-হাসাইলেন, এখন সব জিনিসেই ভেজাল। ভেজাল বিষ খেয়ে দেখা গেল, পেট খারাপ ছাড়া আর কিছুই হল না। শুধু হাসপাতালে ছুটাছুটি হবে... :-বাসের নিচে ঝাঁপ দিবো তাহলে... :-দিবেন, দেন তবে কাজ হবে বলে মনে...

সুন্দরী পকেটমার

Image
রাতে গিন্নীকে ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় ফিরছি। শ্যামলী শিশুমেলার সামনে জেব্রাক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হতে হবে। একের পর যানবাহন ছুটে চলছে, এর মধ্যে দিয়েই পার হওয়া ছাড়া কোন উপায় নাই। তাই দেখেশুনে সাবধানে রাস্তার প্রথম লেন পার হয়ে দ্বিতীয় লেন পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।  এমন সময় পেছনে এসে বেশ কয়েকজন মেয়ে মহিলাসহ জড়ো হয়ে হাউকাউ শুরু করে দিল। আমাকে বারেবার ঠেলছে, ভাই রাস্তা পার হন। রাস্তায় একের পর এক গাড়ি চলছে, এরমধ্যে দিয়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে পার হওয়া রিক্সের ব্যাপার। তবুও তারা আমাকে রাস্তা পার হন বলে পেছন থেকে তাড়া দিতে লাগলো।  রাস্তা একটু ক্লিয়ার হলে গিন্নী ও ছেলে সাথে নিয়ে দেখে শুনে পার হলাম। আমাদের সাথে উনারাও রাস্তা পার হন, যদিও উনারা আগেও পার হয়ে যেতে পারতো দলবলসহ।  আমরা রাস্তা পার হয়েই রিক্সায় চড়ে বাসায় চলে আসি। বাসায় এসে গিন্নী দেখে তার ভ্যানিটি ব্যাগের চেইন খোলা। ব্যাগের ভেতর মোবাইলটা উধাও! মোবাইলটা নিশ্চয়ই রাস্তা পার হওয়ার সময় হাওয়া হয়ে গেছে। পেছন থেকে সুন্দরী পকেটমারের দলই এই কাজটি করেছে। এমন ঘটনা ওখানে প্রায়ই ঘটে, জেনেছি। ধরা খেলেও তাদের কিছু বলা যায়না।...

আওয়ামী শিশুলীগ

সকাল বেলায় কলিংবেলের শব্দ। দরজা খুলেই দেখি পাশের ফ্ল্যাটের ছলিম ভাই। একটা মিষ্টি আমার সামনে ধরে বলেন, -ভাই, মিষ্টি খান। অবাক হয়ে জিগ্যেস করলাম,    -কিসের মিষ্টি? -ভাই, সুসংবাদ... -সুসংবাদ! বিয়ে করেছেন? -নাহ -চাকরি পেয়েছেন? -নাহ -তাহলে, রাজাকারের ফাঁসির রায়ের মিষ্টি? -আরে নাহ, শোনেন আমার ভাতিজা... -ও বুচ্ছি, গোল্ডেন এপ্লাস পেয়েছে -তাও নাহ -তাহলে, কিসের সুসংবাদ?? খুশিতে গদগদ ছলিম ভাই বলেন,   -ছাত্রলীগের আদর্শ ছড়িয়ে দিতে মাধ্যমিক স্কুল কমিটি গঠনের ঘোষণা হয়েছে। -ও আচ্ছা! আপনি কমিটির সদস্যপদ লাভ করেছেন? -আরে, সেটাও নাহ -তাহলে পদের লোভে স্কুলে আবার ভর্তি হয়েছেন? -ওরে..., তাও নাহ -তাহলে..., কিসের মিষ্টি?  -আমার ভাতিজা ঢাকা মহানগর উত্তরের স্কুল কমিটির যুগ্ন আহাবায়ক নির্বাচিত হয়েছে। একথা শুনে টাস্কি না খেয়ে মিষ্টিটা খেয়ে বললাম,   -ও তাই! তা আপনার ভাতিজার বয়স কত? -এবছর ছ'য়েতে পা দিয়েছে। দু'বার কেজিতে ফেল না করলে, এখন ক্লাস টু'তে পড়তো। -এতে আপনার খুশির কারন কি? -বোঝেন না, আগে তদ্বিরের জন্য মামা-চাচা লাগত। এখন লাগবে ভাগ্নে-ভাতিজা।...