শব্দের জাদুঘর

আমার ছেলে সবেমাত্র পৃথিবীকে একটু একটু করে চিনতে শুরু করেছে। এখনো মুখের ভাষা ফোঁটেনি। দেয়ালে টিকটিকি দেখলে অথবা কোথাও তেলাপোকা মরে পড়ে থাকলে, তা দেখে হুঁউ-হুঁউ-হুঁউ শব্দ করে আমাকে তর্জনী আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখানোর চেষ্টা করে।

আমার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ নুর হোসেন দিবসে জাদুঘরে ঘুরতে গেলাম। ফাটাকেষ্ট ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেল, 'গণ-অভ্যুত্থান' শব্দটি প্রধানমন্ত্রী জাদুঘরে পাঠিয়েছেন। উনার কথাটি শুনে এটা দেখতে খুবই ইচ্ছে হলো। 'গণ-অভ্যুত্থান' শব্দটা সত্যিই যাদুঘরে আছে কিনা।



আমরা জাদুঘরে ঢুকেই এদিক সেদিক ঘুরতে লাগলাম। প্রথমে দেখতে পেলাম, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ভ্যানটি। এক কোনায় অনেক যত্ন সহকারে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তার পাশে চোঁখ পড়তেই অবাক হয়ে গেলাম! একটা সুন্দর সেল্ফে সাজিয়ে রাখা জনগনের কাঙ্ক্ষিত শব্দ 'গণ-অভ্যুত্থান'। তারমানে কাদের সাহেব মিথ্যে বলেনি।




চমক তখনও বাকি! আমি অবাক হয়ে গেলাম, গণ-অভ্যুত্থান শব্দটার পাশে নিদারুণ অবহেলায় 'বাক স্বাধীনতা' পড়ে আছে। একটু এগিয়ে গিয়ে বামদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি 'আইনের শাসন'। অযত্নে জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। 

তার আরেকটু সামনে এগিয়ে 'নৈতিকতা' কে দেখতে পেলাম। একেবারে ঝিম মেরে পড়ে আছে। সবাই যখন এখানে ঠাঁই নিয়েছে, সেও এখানে আছে নিশ্চয়ই।  আমি হন্যে হয়ে সেই শব্দটা খুঁজতে লাগলাম।



এই শব্দটা অবশ্যই এখানে আছে, থাকতেই হবে। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলাম না। আমি স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ছাড়লাম। যাক, সবাই আসলেও সে আসে নাই। তারমানে, দেশ থেকে সে এখনো বিলুপ্ত হয়নি।

আমরা জাদুঘর থেকে বের হবো, এমন সময় আমার ছেলে হুঁউ-হুঁউ-হুঁউ শব্দ করে আমাকে টানতে থাকে। আমাকে প্রধানমন্ত্রী বহনকারী ভ্যানের কাছে নিয়ে গেলো। তারপর তর্জনী আঙ্গুল উঁচিয়ে নিচু হয়ে দেখায়। আমি মাথা ঝুঁকে নিচু হয়ে দেখে অবাক! ভ্যানের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে পড়ে আছে, সেই শব্দটি।



এই শব্দটাই খুঁজছিলাম এতোক্ষণ। কিন্তু একি তার অবস্থা! খুবই শোচনীয় অবস্থায় মারাত্মকভাবে নিষ্পেষিত হয়ে কাতরাচ্ছে আমাদের 'গনতন্ত্র'। জাদুঘরে ঠাঁই নিয়েও তার করুণ অবস্থা। আহারে বেচারা...       


Comments

জনপ্রিয় ব্লগসমূহ

ইবলিশ শয়তান

প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা

একটি চশমা ও কলমের গল্প

আলাদিনের দৈত্য

কাঙ্গালি ভোজ

মুরগী কবির

জন্মদিনের সারপ্রাইজ

এ তালা ভাঙবো কেমন করে

কাছে আসার গল্প

ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ