মুরগী কবির
সাত সকাল বেলা ছাদে হাঁটাহাঁটি করছি। হঠাৎ চোঁখ পড়লো পাশের ছাদে। মেহেদি রংয়ে সাদা-পাকা গোঁফওয়ালা এক ভদ্রলোক বিষন্নচিত্তে ছাদে পায়চারী করছেন। ভদ্রলোক লোকটিকে কেমন চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেন দেখেছি? ওহ! মনে পড়েছে উনি সেই লোক! যিনি একজন নাস্তিক, চেতনা ব্যবসায়ী ও মুরগীযোদ্ধা। যার নাম শাহরিয়ার কবির। তবে উনি 'মুরগী কবির' হিসেবে খ্যাত। কৌতুহলী হয়ে তার সামনে এগিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
-কেমন আছেন?
গম্ভীর গলায় 'ভালা আছি' বলে আমাকে জিগ্যেস বলেন,
-তুমি কেডা?
আমি 'নজরুল কবীর' বলতেই আমার দিকে আড়চোঁখে তাকিয়ে বলেন,
-ফাজলামী করো
-ফাজলামী! কোথায় করলাম?
-এইযে নামের শেষে 'কবির' লাগাইছো
-ওমা! নামের শেষে কারো কবির নামটা থাকতে পারেনা?
-পারে, তবে এই নামের শব্দটা তোমরা বিকৃতভাষ্য করে ফেলেছো। যার তার নামের পাছায় লাগিয়ে দাও।
-যেমন
-এইযে, মুরগীর পাছায় লাগিয়ে বলো 'মুরগী কবির'।
আমি ফিক করে হেসে ফেললাম। আমার হাসির শব্দ শুনে মনে হয়, উনার কাশি শুরু হয়ে গেলো। উনি কাশছেন আর আমি এদিক ওদিক উঁকি দিয়ে মুরগী খুঁজছি।
উনি আমার উঁকিঝুকি দেখে কাশি থামিয়ে বলেন,
-তুমি কি খুঁজছো?
-না মানে, মুরগীর কক কক আওয়াজ শুনতে পেলাম। মনে হয়, এদিকে কোথাও আছে।
-তুমি আবারও ফাজলামী করছো। ছাদে মুরগী আসবে কোত্থেকে?
-আমি সিরিয়াস, এখানে কোথাও আছে মনে হচ্ছে। কক কক শব্দ শুনেছি...
-ও বুঝেছি, ওটা আমার কাশির শব্দ।
ইমেজিং ব্যাপার! কাশির খক খক শব্দ অবিকল মুরগীর কক কক আওয়াজের মত। প্রশ্ন করলাম,
-আপনি কি মুরগি, বেশি খান?
-দেখো, তুমি কিন্তু লিমিট ক্রস করছো?
-কোথায়?
-এইযে বারেবার মুরগীর প্রসঙ্গ টানছো
-ঠিক আছে, আর মুরগী বলবো না। চিকেন বলি...
-বিয়াদ্দপ পোলা, ঘুরে ফিরে মুরগীর ঠাং ধরে টানে।
এই কথোপকথনটি কাল্পনিক। তবে সত্য কথা কি জানেন? মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যখন বাঙালী বীরসেনা'রা হাতে অস্ত্র ধরেন তখন তিনি তাগড়া যুবক হয়েও ধরেছিলেন। তবে সেটা অস্ত্র না মুরগী। আর সেই মুরগী পাকবাহিনীকে সাপ্লাই দিতেন। মুক্তিযুদ্ধে যার ভুমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ, সে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গল্প শোনান। মুুুক্তিযুদ্ধের সময়ের কুকর্ম ঢাকতে ও বর্তমানে সময়ে পিঠ বাঁচাতে 'ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি' গঠন করে ভারতীয় দালাল হয়ে চেতনা ফেরি করে বেড়ান। ইসলামবিদ্বেষি কথাবার্তা বলেন।
তাকে নিয়ে আরেকটি মজার কাহিনী বলে লেখাটি শেষ করবো। আগেভাগেই গলা পরিস্কার করে নিন, হাসতে চাইলে। হাসিটা অবশ্যই খিকখিক করে হবে। তবে কক কক করে হাসলেও সমস্যা নাই।
যাইহোক, গল্পে ফিরে যায়। আমি জনাব কবির সাহেবকে 'মিতা' বলে সম্বোধন করলাম। তিনি বলেন,
-হোয়াট ইজ মিতা?
-মিতা ইজ সেম টু সেম নেম।
-ও আচ্ছা!
আমি উনার এমন মনমরা হয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলাম। এবার উনি তুমি থেকে তুই তে এসে বলেন,
-আর বলিস নে, এই ডিসেম্বর মাস আসলে আমি শুধু একটি স্বপ্ন দেখি আর বিশ্রী কান্ড ঘটায়।
-ঘটনাটা শেয়ার করেন। মনটা হাল্কা হবে।
-ঠিকই বলেছিস, তুই মিতা বলে ডেকেছিস। তোকে বলা যায়।
-জ্বী, বলুন
-দুঃস্বপ্নটি হলো। (বলতে গিয়ে থেমে গেলেন)
আমি তাগিদ দিলাম বলার জন্য। তিনি বলতে শুরু করেন। দুঃস্বপ্নটি হলো। আমি যেন মারা গেছি। আমার সামনে দুটা পথ, একটা স্বর্গের আরেকটা নরকের। আমি স্বর্গের দিকে হাঁটা দিলাম। কিন্তু স্বর্গের প্রহরী গেটে আমাকে আটকে দিল।
আমি তার কথা কেড়ে নিয়ে বললাম,
-আটকে দেওয়াটাই স্বাভাবিক। ধর্মকর্ম কোনদিন করেনি। মরনের পর স্বর্গে যেতে চান কিভাবে?
-মিতা'রে, নরকেও গিয়ে ছিলাম। সেখানেও প্রহরী আটকে দিয়েছে।
আমি আবারও বললাম,
-দিবেই তো, আপনি ছিলেন নাস্তিক। স্বর্গ-নরক কোনটাই বিশ্বাস করেন না। মরার পর সেখানে যাবার কথা ভাবেন কিভাবে?
আমার একথা শুনে তিনি অভিযোগের সুরে বলেন,
-এইটা কেমন কথা। আমারে স্বর্গেও ঢুকতে দিবে না, নরকেও ঢুকতে দিবে না। তাইলে আমি থাকুম কই? ফুটপাতে??
উনার কথা শুনে চিন্তায় পড়ে গেলাম। জিগ্যেস করলাম, 'তারপর কি হলো?' উনি গটগট করে বলতে থাকেন। প্রহরীকে বললাম রেগে গিয়ে, 'ইউ নো, আই য়্যাম আ কম্প্লেইন বয়। এক্ষুনি ইশ্বরের কাছে কমপ্লিন দিতেছি।' আমার একথা শুনে প্রহরী ভড়কে গেলো। এদিকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে নরক থেকে লোকজন উকিঝুকি মারা শুরু করে দেয়। বিশৃংঙ্খলা ঠেকাতে প্রহরী নরম গলায় বলল, 'কবির সাব, কমপ্লেইন কইরা কাজ নাই। আমরা সমঝোতায় আসতে পারি, আপনি চাইলে।'
'কি সমঝোতা?' আমি অবাক হয়ে জিগ্যেস করতে বলল, 'ফের দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিবে।'
-তাই নাকি! প্রস্তাবটা ভালো।
-হ্যা, আমাকে একটি শর্ত দিলো
-শর্তটা কি?
-চোখ বন্ধ করে 'জয় বাংলা' বলতে হবে।
-এটা তো অনেক সহজ ব্যাপার
-এটা তো অনেক সহজ ব্যাপার
'হ্যাঁ' আমি চোঁখ বন্ধ করে 'জয় বাংলা' বললাম। চোখ খুলে দেখি, আমি সত্যি দুনিয়ায় চলে এসেছি। তবে মানুষ না মুরগী হয়ে! নাকে মুরগীর বিষ্ঠার তীব্র বিশ্রী গন্ধ পাচ্ছি। শালা প্রহরী বাচ্চা, তুই মুরগী বানাইলি! তাও আবার ফার্মের মুরগী।
আমি মনযোগ সহকারে শুনছি। উনি একাধারে বলে যাচ্ছেন। আমার পাশের মুরগিটা কক কক করে তাগিদ দিল, 'আয় হায়! তুই এখনো ডিম পাড়োস নাই? তাড়াতাড়ি ডিম পাড়! ফার্মের মালিক এখুনি এসে পড়বে। এসে যদি দেখে তুই এখনো ডিম পাড়োস নাই। তাইলে তুই শ্যাষ, তোরে রোষ্ট বানায়ে খেয়ে ফেলবো।' হতভম্ব হয়ে ঢোক গিলে বললাম, 'আমি রোস্ট হতে চাইনা। ক্যামনে ডিম পাড়ে আমারে একটু দেখায়ে দে...।' আমাকে দেখিয়ে দিলো, দুপা চ্যাগায়ে খাড়াইয়ে কিভাবে কোঁত দিতে হয়।
এমন সময় তাকিয়ে দেখি, ফার্মের মালিক দরজার সামনে। প্রাণটা বাঁচানোর তাগিদে প্রাণপনে কোঁত দিলাম।
'স্যার, অবশেষে ডিম দিলেন?'
-আরে নাহ, হেগেটেগে বিছানা একাকার করে দিয়েছি...
আমি নাক চিপে ধরলাম। উনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলেন, 'প্রতিরাতে এমন স্বপ্ন দেখি আর বিছানা নষ্ট করি। তোর কাছে কোন উপায় আছে?'
চটজলদি উত্তর দিলাম, 'আছে।'
-কি উপায়?
বললাম, 'আপনি বিশিষ্ট বীরকোদাল চেতনার ফিল্টার আবিষ্কারক ড. জাফর ইকবাল ষাঁড়ের কাছে যান। উনিও আপনার মতই চেতনা ব্যবসায়ী, যে মুক্তিযুদ্ধের সময় গর্ত খুঁড়ে লুকিয়ে ছিলেন চৌকির তলায়। সে এখন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের শিক্ষা দেন এই প্রজন্মকে।'
'বুঝলাম, তো আমি গিয়ে কি করবো।'
'কিভাবে হর হর করে বমি করতে হয়। এইটা শিখে আসবেন। শুনেছি, উনি প্রায় হর হর করে বমি করেন।'
'মানে?'
'মানেটা হচ্ছে, আপনি নিচের মাল উপর দিয়ে ছেড়ে দিবেন, ব্যস। তাহলে আর নিচ দিয়ে বের হওয়ার চান্স থাকবেনা।'
একথা বলে ছুটে বাসায় এলাম। ষাঁড় জাফর ইকবালের নাম মুখে নিছি, এখন ব্রাশ করতে হবে।।
ভাই, আপনি পারেনও।
ReplyDeleteব্লগে কে কমেন্ট করলো, তার নাম উল্লেখ থাকে না। তাই দয়া করে কমেন্ট করার সময় নিজ নামটা উল্লেখ করবেন। ধন্যবাদ, কমেন্ট করার জন্য।
Delete