ইবলিশ শয়তান

খুব ছোট্টবেলা থেকেই টুকটাক লেখালেখি করি। ক্লাস সেভেন বা এইটে যখন পড়ি সেই সময়ে আমার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। পাবনার একটি অখ্যাত ত্রৈমাসিক পত্রিকা 'দোলনচাঁপা'য় লিখেছিলাম সেই প্রবন্ধটি। যার নাম 'ইবলিশ কেন শয়তান'। প্রথম লেখায় আমি খুবই এক্সাইটেড ছিলাম। অনেকের প্রশংসাও পেয়েছিলাম।    
তারপর থেকে নিয়মিত লেখালেখি করি। সমাজের যেখানে অসংগতি ও অন্যায় সেখানেই কলম ধরার চেষ্টা করি। আবার নিজের ভালো লাগা থেকে লিখি। মাঝেমধ্যে লেখার আবদারেরও লিখি। তেমন একজন লেখার আবদার নিয়ে এসেছিল। সে আর কেউ নয়, স্বয়ং 'ইবলিশ শয়তান'।

একাকী বাসায় ঘুমিয়ে আছি। হঠাৎ গভীর রাতে, নাকেমুখে কথা বলার আওয়াজ শুনতে পেলাম। কে যেন আমার নাম ধরে ডাকছে,
ডাক শুনে চমকে উঠে বললাম,
'কে? কে?'

অন্ধকারময় ঘরের বারান্দা থেকে ধোঁয়া উড়ছে। তার মধ্যে থেকে কন্ঠ ভেসে এলো,
'আঁমি ইঁবলিশ'

ইবলিশ শয়তান














হঠাৎ ঘুম ভেঙেছে। তাই থতমত খেয়ে বললাম, 
'বালিশ! এতরাতে কে চাই বালিশ?'
'বাঁলিশ নাঁ, আঁমি ইঁবলিশ'
'ইবলিশ! কোথাকার ইবলিশ?'
'ভাঁইয়্যু, আঁমি শঁঁয়তান ইঁঁবলিশ' 
'তুই ইবলিশ শয়তান!'
'চিঁনতে পেঁরেছেন তাঁহলে'
'তো কি চাস?'
'ভাঁইয়্যু, আঁপনাকে দেঁখতে এঁসেছি'

আমি ঘুম ঘুম চোখে হাই তুলে বললাম,
'আমায় দেখার কি আছে?'
'দেঁখার অঁনেক কিঁছু আঁছে। আঁপনি গুঁণী মাঁনুষ'
'বলিস কী!'
'জ্বীঁ ভাঁইয়্যু, আঁপনার হাঁতে যাঁদু আঁছে।'
'কিসের যাদু?'
'ঐঁযে সুঁন্দর কঁরে গুঁছিয়ে লিঁখতে পাঁরেন'
'আরে লিখতে সবাই পারে। কেউ লেখে, কেউ লেখে না এই আর কি'
'তাঁরপরও ভাঁইয়্যু, আঁপনার লেঁখাগুলো অঁসাধারণ। আঁমি নিঁয়মিত আঁপনার ব্লঁগে ঢুঁ মাঁরি।

বুঝতে পারছি, শয়তান ব্যাটা নিশ্চয়ই কোন মতলব নিয়ে এসেছে। তা না হলে, এতো রাতে এসে আমারে তেল মারবে কেন? সেই তেলের জাহাজের নোঙর ফেলে দিয়ে বললাম,
'কেন এসেছিস সেটা বল?'
'আঁপনার সাঁথে দুঁটা কঁথা বঁঁলবো'
'এতো রাতে তোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না'
'ভাঁইয়্যু, মঁনে বঁঁড় কঁঁষ্ট নিঁয়ে এঁসেছি'
'তোর আবার কিসের কষ্ট'
'আঁছে, সেঁজন্যি আঁপনার দ্বাঁরস্থ হঁঁয়েছি'
'কি হয়েছে?'
'ভাঁইয়্যু, আঁমায় নিঁয়ে এঁকটা গঁল্প লিঁখেছিলেন। মঁনে আঁছে'
'হ্যাঁ, মনে থাকবে না কেন'
'দাঁরুণ লিঁখেছেন'
'থ্যাঙ্কস'
'ভাঁইয়্যু, থ্যাঁঙ্কস তোঁ আঁমি আঁপনাকে দিঁবো'
'কেন?'
'আঁমাকে নিঁয়ে লিঁখছেন'
'ও আচ্ছা! তা এতো বছর পর থ্যাঙ্কস দিতে এসেছিস'
'আঁগে আঁসতে চেঁয়েছি কিঁন্তু পাঁরি নাঁই।'
'এখন আসলি কিভাবে?'
'বঁড়ই নিঁরুপায় হঁয়ে'
'নিরুপায়?'
'ভাঁইয়্যু, মঁনে বঁড় আঁশা ছিঁল। এঁদেশে শঁয়তানী রাঁজ্য কাঁয়েম কঁরবো। সেঁই আঁশার গুঁড়ে বাঁলি...'
'শয়তানের উপর শয়তানী! কে করলো?'
'আঁমার এঁক জ্ঞাঁতিবোন।'

অবাক হয়ে বললাম,
'তোর আবার বোনও আছে!'
'ছিঁল নাঁ, পঁরিচয়ের সুঁত্রে হঁয়েছে'
'সে! কে?'
'এঁক মঁহা ক্ষঁমতাধর ডাঁইনীবুঁড়ি।'
'কি বলিস'
'জ্বীঁ, যাঁর কাঁছে আঁমি নঁস্যি। কুঁমন্ত্র আঁমি কিঁ দিঁবো, উঁল্টো আঁঁমাকেই দেঁয়।'
'তাই নাকি!
'সাঁরাবিশ্ব আঁমি চাঁলায়, আঁর এঁখানে সেঁ আঁমারে চাঁলায়'
'ভালো তো, দুজনে মিলমিশে থাক'
'এঁটা কিঁ সঁম্ভব?'
'কেন?'
'ভাঁইয়্যু, এঁক বঁনে দুঁই বাঁঘ থাঁকতে পাঁরে কিঁন্তু দুঁই শঁয়তান অঁসম্ভব।'
'তাহলে কি করবি?'
'ভাঁবছি, এঁদেশ ছেঁড়ে চঁলে যাঁবো'

সবেমাত্র ফোর জেনারেশন শুরু হয়েছে। এখনো ফাইভ, সিক্স, সেভেন জেনারেশন পড়ে আছে। আমাদেরও  অনেক কিছু দেখার বাকি আছে। ইবলিশ চলে গেলে জাতি তা মিস করবে। তাই বললাম,
'একটা মিশন অন্তত শেষ করে যা।'
'শেঁষ বঁঁলছেন কীঁ, আঁমি শুঁরুই কঁরি নাঁই!'
'কস্কি! তাহলে এতো আকাম ও কুকাম হচ্ছে ক্যামনে?'
'ঐঁযে জ্ঞাঁতিবোন কঁরছে'
'তাহলে, তুই কি করছিস?'
'আঁমি শিঁখছি'

শয়তানে নাড়েচাড়ে শুনেছি কিন্তু শয়তানকেও কেউ নাড়েচাড়ে, শিক্ষা দেয় এটা প্রথম শুনলাম। আমি চোখেমুখে পানির ঝাপ্টা দিয়ে বললাম,     
'তো আমার কাছে কি শিখতে এসেছিস?'
'কিঁছু শিঁখতে নাঁ'
'তাহলে কেন এসেছিস?'
'আঁবদার নিঁয়ে এঁসেছি'
'মামার বাড়ির আবদার!'
'নাঁ, নাঁনার বাঁড়ির আঁবদার বঁঁলা যেঁতে পাঁরে'
'তোর কোন আবদার রাখতে পারবোনা'
'বঁড় আঁশা নিঁয়ে এঁসেছিলাম'
'ঠিক আছে, নিরাশা নিয়ে যা'
'এঁকটু সঁদয় হোঁন'
'সরি, হতে পারবো না।'
'প্লিঁজ ভাঁইয়্যু, প্লিঁজ...'
'কি আশ্চার্য্য! বলছি তো পারবো না।
'আঁমি অঁস্তিত্ব ক্রাঁইসিসে ভুঁগছি। উঁপকার নাঁ কঁরিলে ধ্বঁংস হঁয়ে যাঁবো'

একথা শুনে মনটা গলে হয়ে গেলো। মন্দ যদি না থাকে তাহলে ভালোর দাম নাই। সুর নরম করে বললাম,
'কি উপকার করতে হবে'
'এঁঁকটা গঁল্প লিঁখতে হঁবে'
'গল্প?'
'জ্বীঁ ভাঁইয়্যু'
'তোকে নিয়ে লিখবো?'
'নাঁ'
'তাহলে কাকে নিয়ে লিখবো?'
'আঁমার জ্ঞাঁতিবোনকে নিঁয়ে'
'কেন?'
'তাঁকে রিঁসার্চ কঁরতে চাঁই।'
'এতে তোর লাভ কি? '
'ভাঁইয়্যু, আঁমার জঁন্য লঁজ্জাজনক। কেঁউ গাঁলিতে আঁমার নাঁম নেঁয় নাঁ, নেঁয় জ্ঞাঁতিবোনের।
'ও বুঝছি, ক্ষঁমতা বেশি যার, নাম বেশি তার'
'সেঁজন্যি, আঁমি তাঁকে জাঁনবো'
'লিখবো টা কি?'
'আঁরেকটা গঁল্প,'ডাঁইনীবুড়ি কেঁন ক্ষঁমতাবান!'

মাঝরাতে ডাইনীবুড়ির গল্প লেখার প্রস্তাব পেয়ে রাগে ও দুঃখে চিৎকার দিয়ে বললাম,
'ওরে, কে আছিস। একটা কলস দে'
'ভাঁইয়্যু, জঁঁল খাঁবেন?'
'না, গলায় বেঁধে ডুবে মরবো'
'ঠিঁক আঁছে, এঁক কঁঁলস দোঁয়াত-কাঁলি দেঁয়। লেঁখা শেঁষ হঁলে মঁরে যাঁইয়েন'
'তুই যে শয়তান, এটাই প্রমাণ'
'সঁব জ্ঞাঁতিবোনের কাঁছে শেঁখা'
'শোন, তোর জ্ঞাতিবোনের সমন্ধে লিখতে পারবো না। টিভি অন করে দিচ্ছি দেখে নে...'

ইবলিশ শয়তান বসে টিভিতে দেখছে। আমি চোঁখ বন্ধ করে কেবল ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করেছি। ঠিক তখন শুনতে পেলাম ইবলিশের চিৎকার, 
'ইঁউরেকা - ইঁউরেকা'
'কি ব্যাপার, এমন চিৎকার করছিস ক্যান?'
'ভাঁইয়্যু, আঁমি পেঁয়েছি।'
'কি পেয়েছিস?'
'জ্ঞাঁতিবোনের দর্শন'
'কি দর্শন?'
'মিঁথ্যা বঁলার অঁসাধারণ ক্ষঁমতা'
'তাহলে, এখন দূর হ শয়তান'
'চঁলে যাঁচ্ছি, তঁবে এঁকটা মিঁথ্যে বঁলে যাঁয়।'
'মিথ্যে কি কথা?'
'বিঁবি হাঁওয়াকে গঁন্ধম ফঁল খাঁওয়ানোর পিঁছনে আঁমার কোঁনো হাঁত ছিঁলো নাঁ।'

হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। তাকিয়ে দেখি, টিভি এখনো চলছে। টিভিতে বকবক আর ক্যাচাল শুনতে শুনতে, কখন যে ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই।

Comments

জনপ্রিয় ব্লগসমূহ

প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা

একটি চশমা ও কলমের গল্প

আলাদিনের দৈত্য

কাঙ্গালি ভোজ

মুরগী কবির

জন্মদিনের সারপ্রাইজ

এ তালা ভাঙবো কেমন করে

কাছে আসার গল্প

ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ