একটি চশমা ও কলমের গল্প
২০০১ সাল। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। ভাল ছাত্র না হলেও নিয়মিত ক্লাস করার দরুণ ভাল ছাত্র হিসেবে পরিচিতি হই। আমি বরাবর মিশুক প্রকৃতির, তাই খুব সহজেই সবার সঙ্গে দ্রুত বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ক্লাস না থাকলে আমি তাদের সঙ্গে আড্ডা দেয়, মজা ও মাস্তি করি।
সদ্য যৌবনে পা দেওয়ায় চোখে রঙিন চশমা। যা দেখি তাই ভালো লাগলেও আমি একটু ব্যতিক্রম ছিলাম। প্রেম-ভালবাসার অফার সরাসরি অথবা আকার ইঙ্গিতে পাচ্ছি প্রায়শই। সেগুলো কৌশলে ইগনোর করছি। আমি যে ধোঁয়া তুলশীপাতা তা কিন্তু না। তবে এগুলো আমার পছন্দ হতো না। আমার পছন্দ বরাবরের মত'ই ধোঁয়াশা, মিথ্যে মায়া ও মরিচিকার মত। যা শুধু দুর থেকে হাতছানি দেয়, কাছে টানে না।
যাইহোক, সেই গল্পে আসি। একদিন ক্লাসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি। আড্ডা ও গল্পের ফাঁকে আমার এক বান্ধবী বলে ফেলে, 'কবির, তুমি না খুউব সুন্দর। তোমাকে আমার খুউব ভালো লাগে। আমি তোমাকে ভালবাসি।'
শুনে টাস্কি খেয়ে গেলাম। হুট করে এমন কথা শুনবো, ভাবিনি। কিছুটা থ'মেরে বসে রইলাম। তারপর নিরবতা ভেঙে এটাকে গল্পের একটা অংশ মনে করে প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলি।
শুনে টাস্কি খেয়ে গেলাম। হুট করে এমন কথা শুনবো, ভাবিনি। কিছুটা থ'মেরে বসে রইলাম। তারপর নিরবতা ভেঙে এটাকে গল্পের একটা অংশ মনে করে প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলি।
তারপর থেকে লক্ষ্য করি, সেই মেয়েটি আমার প্রতি একধরনের প্রেমাসক্ত হয়ে পড়ছে। হয়তো আমার নিরবতায় সম্মতির লক্ষন মনে করে মেয়েটি আমার প্রতি অধিকার ফলাতে চেষ্টা করছে। এতে আমি কিছুটা বিচলিত হয়। এবং লক্ষ্য করলাম, তার বান্ধবীরাও তার সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে নানান উদ্ভট কথাবার্তা বলছে। আমার প্রচন্ড রাগ হলো।
একদিন তো রেগেমেগে ক্লাস না করে বাসায় চলে এলাম। বাসায় এসে চিন্তা করলাম কিভাবে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গুড আইডিয়া, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। এখন থেকে সেই মেয়েটিকে আপু বলে সম্বর্ধন করবো।
ব্যস, পরের দিন কলেজে গিয়ে তাকে 'আপু' বলে সম্বর্ধন করি। এই সম্বর্ধনটি প্রথমে সহজভাবে মেনে না নিলেও পরে, অবশ্য সে একটি শর্তে মেনে নিল। শর্তটি হলো, প্রতিদিন আমার গায়ে চিমটি কাঁটবে। তার নাকি চিমটি কাঁটতে খুব ভালো লাগে। আমাকে দেখলে বলতো, 'কবির তোমাকে একটা চিমটি কাঁটিইইই'। আমিও বলতাম, 'ঠিক আছে কাঁটুন!!'
হঠাৎ বন্ধুদের আড্ডার মাঝে, একদিন বলা নাই কওয়া নাই বাদামওয়ালা এসে বাদাম মেপে দিল। অবাক হয়ে জিগ্যেস করলাম, 'কি ব্যাপার'? আমরা তো বাদাম অর্ডার দেইনি।' বাদামওয়ালা বললো, 'অর্ডার হয়ে গেছে।'
কে দিল? বলতেই বাদামওয়ালা দেখিয়ে দেয় আমার সেই 'চিমটি কাঁটি' আপুটিকে। এভাবে সে প্রায়শই আমাদের আড্ডায় এটা-ওটা কিনে পাঠিয়ে দিতো। সবাই মিলে মজা করে খেতাম।
কে দিল? বলতেই বাদামওয়ালা দেখিয়ে দেয় আমার সেই 'চিমটি কাঁটি' আপুটিকে। এভাবে সে প্রায়শই আমাদের আড্ডায় এটা-ওটা কিনে পাঠিয়ে দিতো। সবাই মিলে মজা করে খেতাম।
একদিন তো চুংগ্রাম পাঠিয়ে পুরো হুলুস্থুল বাধিয়ে দিলো। চুংগ্রামের চেয়ে বন্ধু সংখ্যা বেশি হওয়ায় কাড়াকাড়ি লেগে গেলো। তাই 'চিমটি কাঁটি' আপুটিকে কিছু না দেওয়ার জন্য মানা করে দিই। সেদিন থেকে সে সবকিছু দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সেইসাথে সেও নাকি চুংগ্রাম খাওয়া ছেড়ে দেয়।
একদিন ক্লাস শেষে কলেজের তিন তলায় ক্লাসরুমের সামনে বারান্দায় আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় আমার কেমন জানি দুচোখ চুলকাতে শুরু করলো। আমি কথা বলছি সাথে চোঁখও চুলকাচ্ছি।
ঠিক সেই সময়ে, 'চিমটি কাঁটি' আপুটি এসে একটি চশমা ধরে আমার সামনে এবং চশমাটি নিয়ে চোখে দিতে বলে। আমি চশমা নিতে অসম্মতি জানাই। কিন্তু পরে যখন আবার চোঁখ চুলকাতে লাগলাম তখন সে একপর্যায়ে জোর করে আমার হাতে চশমা দিয়ে চলে যায়। আমি চশমাটা তাকে ফেরৎ দেওয়ার জন্য তার পিছু পিছু যায়, কিন্তু লাভ হল না। সে চশমাটা না নিয়ে দ্রুত সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে চলে যায়।
ঠিক সেই সময়ে, 'চিমটি কাঁটি' আপুটি এসে একটি চশমা ধরে আমার সামনে এবং চশমাটি নিয়ে চোখে দিতে বলে। আমি চশমা নিতে অসম্মতি জানাই। কিন্তু পরে যখন আবার চোঁখ চুলকাতে লাগলাম তখন সে একপর্যায়ে জোর করে আমার হাতে চশমা দিয়ে চলে যায়। আমি চশমাটা তাকে ফেরৎ দেওয়ার জন্য তার পিছু পিছু যায়, কিন্তু লাভ হল না। সে চশমাটা না নিয়ে দ্রুত সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে চলে যায়।
চোখ চুল্কানির সাথে চশমা পড়ার সম্পর্ক কি? সেটা বুঝতে পারলাম না। আজাইরা চশমাটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
ওই সময়, বারান্দার পশ্চিমে একটা ব্রেঞ্চে তিনজন মেয়ে বসে ছিল। একজন আমাকে হাতের ইশারায় ডাক দিলো। আমি অস্বস্তিবোধ নিয়ে তাদের কাছে গেলাম। দুজন বোরকা পড়া আর একজন বোরকাহীন। তিনজন'ই আমার ক্লাসমেট তবে বোরকাহীন মেয়ের নামটির নাম জানি। তার নামটা এখানে নাইবা বলি।তার সাথে আমার একটু ঝগড়া হয়েছিল। ক্লাসরুমে কুড়িয়ে পাওয়া একটি রুমাল নিয়ে।
ওই সময়, বারান্দার পশ্চিমে একটা ব্রেঞ্চে তিনজন মেয়ে বসে ছিল। একজন আমাকে হাতের ইশারায় ডাক দিলো। আমি অস্বস্তিবোধ নিয়ে তাদের কাছে গেলাম। দুজন বোরকা পড়া আর একজন বোরকাহীন। তিনজন'ই আমার ক্লাসমেট তবে বোরকাহীন মেয়ের নামটির নাম জানি। তার নামটা এখানে নাইবা বলি।তার সাথে আমার একটু ঝগড়া হয়েছিল। ক্লাসরুমে কুড়িয়ে পাওয়া একটি রুমাল নিয়ে।
আমি তাদের কাছে যেতেই আমাকে কিছু অবান্তর প্রশ্ন করা শুরু করে। যেটা তাদের কাছে আশা করিনি। কিছুটা বিব্রতর পরিস্থিতির মধ্যে আছি। যার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল, সে আমার হাতের চশমাটি চেয়ে বসে। আমি তার হাতে চশমাটা দিয়ে বললাম, এটা আমার নয় অন্যের। আরেকজন আমার কাছে কলম চাইলো। পকেট থেকে কলম বের করে দিলাম। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি, তারা আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছে। কিন্তু বলতে পারছে না।
এভাবে কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর, চাশমা হাতে নেওয়া মেয়েটিকে দেখিয়ে একজন সরাসরি বলে ফেললো, 'কবির, ও তোমাকে ভালবাসে।'
মাথার উপর দিয়ে মনে হয়, উড়ে গেলো কাক। একথা শুনে তো আমি অবাক! আশ্চর্য হয়ে বললাম, 'তাই নাকি!' তখন সেই মেয়েটি উৎফুল্ল চিত্তে বলে উঠলো, 'হ্যাঁ, কবির আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালবাসি।' তখন একটু মজা করে প্রশ্ন করলাম, 'ভা-লো-বা-সা! এটা খায় না, মাথায় দেয়।'
উত্তরটা এমন পাকনামো ছিল যে পুরাই টাস্কি খাওয়ার মত। বদের হাড্ডি ছাড়া কিছু কিচ্ছু না। বলে কী 'চলো ছাদে গিয়ে তোমাকে বুঝিয়ে দিই।'
আমার বুঝা হয়ে গেছে। এখান থেকে এখন কেটে পড়া উচিত। তাই কঠিন গলায় বললাম, 'চশমা দাও। চলে যাবো।' সেই মেয়েটি বললো, 'আগে বলো রাজি।' বললাম, 'এটা অসম্ভব।' বললো, 'প্লিজ প্লিজ না বলো না। একটিবার হ্যাঁ বলো।' বললাম, 'সেটা সম্ভব নয়। চশমা দাও চলে যাবো।' সে নাছোড়বান্দার মত তবুও বলে যাচ্ছে। অবশেষে সদুত্তর না পেয়ে বললো, 'তুমি 'হ্যাঁ' না বলা পর্যন্ত আমি চশমা দেবো না।'
যদি চশমা আমার হতো। তাহলে রেখেই চলে আসতাম। যেহেতু চশমা আমার নয় সেহেতু চশমা না নিয়ে আমিও যাচ্ছি না। তারা তিনজন মিলে আমাকে অনেক বুঝানো চেষ্টা করলো কিন্তু রাজি করাতে পারলো না। অবশেষে ব্যর্থ হয়ে সেই মেয়েটি চশমা চোঁখে দিয়ে দ্রুত হনহন করে হেঁটে সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে চলে যায়।
আমি কিছুক্ষন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।এরপর রেগে গিয়ে চশমাটি কেড়ে নেওয়ার জন্য দ্রুত নিচে গিয়ে সিঁড়ির গোড়ায় তার পথ আটকে দাঁড়ায়। তারপর হাত উঁচিয়ে জোর করে চশমাটা তার চোঁখ হতে নিতে উদ্যত হয়। ঠিক সেই মুহূর্তে সেই মেয়েটি চটাং করে বলে ফেলে, 'তুমি যদি আমাকে লাইক করো তবেই টার্চ করবে।'
এমনতাবস্থায়, আমি হাত সরিয়ে নিলাম। ডান হাত দিয়ে বাম হাতের তালুতে আঘাত করে চশমা না নিয়ে কলেজের ছাদে উঠে এলাম। কিছুক্ষন পর সেই মেয়েটিও ছাদে উঠে এলো। কোন কথা না বলে বিষন্নচিত্তে আমারও চশমাটা দিয়ে চলে যায়।
এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ক্লাস না করে কলেজ হতে বের হয়। রাস্তা এসে দেখি, সেই দুইজন বোরকাপড়া মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একজন আমার কলম আমাকে ফিরে দিয়ে বললো, তুমি যে এমন ছেলে তা আমাদের জানা ছিল না। আমিও কলমটি হাতে নিয়ে বললাম,
"সব ছেলেদের এক পাল্লায় মাপা ঠিক না।"
Comments
Post a Comment
আপনার মূল্যবান মতামত দিন