আলাদিনের দৈত্য

আলাদিনের দৈত্য
রাতে বিজয় দিবস পালন করে বাসায় ফিরছি। শরীর বেজায় ক্লান্ত। হঠাৎ শক্ত কিছুর আঘাত পায়ে লেগে হোঁচট খেলাম। রাতের আধো আলোয় তাকিয়ে দেখি, সেটা একটি বদনা। কেউ হয়ত ইমার্জেন্সী প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে বদনা রেখেই ছুটে গেছে। তাই ভাবলাম, ফেলে যাওয়া বদনাটা দিয়ে আসি খুঁজে বদনার মালিককে। বেচারা হয়ত কোন মাইনকা চিপায় বদনা ছাড়াই একাকী বসে আছে। বদনাটা দিলে তার অন্তত উপকার হবে।

সেই ভাবনায়, বদনাটি হাত দিয়ে ধরলাম। বদনাটা নাড়াচাড়া করতে গিয়ে অবাক হলাম, এটা বদনা নয় প্রদীপ। হ্যাঁ আলাদিনে প্রদিপ মনে হচ্ছে!
ঘষা দিবো কিনা ভাবছি, ঠিক তখনি আমাকে অবাক করে দিয়ে প্রদীপ থেকে দৈত্য বের হয়ে এলো। বুঝতে পারলাম, প্রদীপের অবস্থাও আধুনিক স্মার্ট ফোনের মত হয়ে গেছে। একটু ছোঁয়াতেই কাজ হয়ে যায়।

আমি মনে মনে বলি। নিশ্চয়ই এবার দৈত্য বলবে, 'মু হাহাহা! মালিক কি চাই?'
কিন্তু দৈত্য ব্যাটা তার কিছুই বললো না, ইমার্জেন্সী ভাবে শুধু বলল, 'বাথরুম কোনদিকে?'

আমি একটি পাবলিক টয়লেট দেখিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর, দৈত্য পাবলিক টয়লেট থেকে বের হয়ে বমি করে দিলো মুখ ভরে। তারপর শান্ত হয়ে বলল, 'আপনাদের পাবলিক টয়লেট বেজায় খারাপ অবস্থা। নিচে দিয়ে বের হইছে, উপর দিয়েও বের করে ছাড়লো। উফফ, দুর্গন্ধ....'

যাইহোক, উর্দ্ধগমন আর নিম্নগমনে নিজেকে খুবই হাল্কা লাগছে। মেজাজটাও ফুরফুরা হয়ে গেছে। তাই বলছি, 'জনাব, আপনার কি চাই?' তার আগে আরেকটি কথা বলে নিই। আমি আপনার একটা ইচ্ছে পূরণ করতে পারবো, তিনটা না। আলাদিনের দৈত্যের মত আমার এত ক্ষমতা নেই।

একথা শুনে আমি ভাবনায় পড়ে গেলাম। কী চাওয়া যায়? নানাবিধ চিন্তা মাথায় আসছে। অতৃপ্ত একটি বাসনার মত উচ্চমার্গীয় চিন্তা মাথায় আসলো। পরক্ষনেই ভাবলাম, ধুর তারে চেয়ে লাভ নাই সেতো আর আগের মত নাই।

একবার ভাবলাম টাকা পয়সা চাই। সামান্য চাকুরিজীবী মানুষ, বেতন যা পায় ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। টাকা পয়সা পেলে প্রতিদিন বিরিয়ানী খেতাম। আর একজনরে দেখিয়ে বলতাম, অ্যাই এ্যাম টাকাওয়ালা বাট নট টাঁকওয়ালা। কিছুক্ষন পর মনে হল, নাহ টাকা পয়সা জীবনে সব কিছু না। এরচেয়ে ভাল শান্তির দেশ আমেরিকায় চলে যাই। এদেশে এতো অন্যায়, অবিচার, অনাচার ও অশান্তি আর ভাল্লাগে না...

দৈত্য আমাকে তাড়া দিয়ে বলল, 'জনাব, জলদি আপনার ইচ্ছের কথা বলুন।'
আমি মাথা চুলকিয়ে বললাম,
-ইয়ে মানে, আমাকে আমেরিকা পাঠিয়ে দাও। এই দেশের কাজ-কারবার আর ভালো লাগচ্ছে না।

দৈত্য খুব অবাক হয়ে বলল,
-আমেরিকা যাইবেন, আপনার পাসপোর্ট, ভিসা আছে? তাছাড়া ট্রাম্প আসার পরে আমেরিকার অবস্থা পাল্টে গেছে। এখন সেখান আগের পরিবেশ নাই।

আমি ভেবে দেখলাম দৈত্য কথায় সত্য। আমেরিকা এখন বাংলাদেশের মত বালুরট্রাকের রাজনীতি করে। তাই মিনমিনে বললাম,
-ঠিক আছে আমেরিকা পাঠাতে হবে না, এই দেশেই থাকবো। একটা কাজ করো।
-কি কাজ জনাব?
-তুমি শুধু, আওয়ামী জাহেলিয়াত থেকে আমাদের মুক্তির ব্যবস্থা করে দাও।

একথা শুনে দৈত্য একদম চুপসে হয়ে গেল। আমি দৈত্যের নিরবতা দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
-কি পারবে না?
দৈত্য আমার কথার উত্তর না দিয়ে বলল,
-আমেরিকা যাইবেন? চলেন...

Comments

Post a Comment

আপনার মূল্যবান মতামত দিন

জনপ্রিয় ব্লগসমূহ

ইবলিশ শয়তান

প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা

একটি চশমা ও কলমের গল্প

কাঙ্গালি ভোজ

মুরগী কবির

জন্মদিনের সারপ্রাইজ

এ তালা ভাঙবো কেমন করে

কাছে আসার গল্প

ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ