একটি পোস্টার খেকো ছাগল

লেবেল প্লেয়িং নির্বাচন হতে চলছে। অথচ একটি দলের নির্বাচনী পোস্টার ছাড়া আর কোন পোস্টার নেই। সেই নির্বাচনী পোস্টারে রাস্তার চারিধারে ছেয়ে গেছে। গাছের কোন পাতা দেখা যাচ্ছেনা, সেই পোস্টারের কারণে। যেদিকে তাকান শুধু একই পোস্টার আর পোস্টার। সবুজ অরণ্য এখন পোস্টারণ্য হয়ে গেছে।          

আমি সেই পোস্টার দেখছি আর হাঁটছি। হঠাৎ পিছন থেকে নুরা পাগলার ডাক শুনতে পেলাম। ফিরে তাকিয়ে দেখি, নুরা পাগলা দড়ি ধরে টানতে টানতে একটা ছাগল নিয়ে আসতেছে। ছাগলটা কিছুতেই আসতে চাইছে না কিন্তু নুরা পাগলা জোর করে টেনে আনছে। ওর কষ্ট দেখে কিছুটা পথ এগিয়ে গেলাম।
নুরা পাগলা হাঁফ ছেড়ে বলল,
-যাক রাস্তায় আপনেরে পাইয়া গ্যাছি, গুরু। ছাগলডা নিয়া বহুত প্যারার মইধ্যে আছি।
-কি হয়েছে?
-সেটা'র জন্যি আপনার কাছে আইছি
-সমস্যাটা কার? তোর না ছাগলের?
-গুরু, ছাগলের

আমি কিঞ্চিত বিরক্তি নিয়ে বললাম,
-ইদানীং তুই বেশি বাড়াবাড়ি করছিস 
-ওমা! কুথায় বাড়াবাড়ি করলাম? 
-এইযে, তোর সমস্যার সাথেসাথে গরু-ছাগলের সমস্যাও নিয়ে আমার কাছে আসতেছিস!
-গুরু, আপনি আমার সব সমেসসা সমাধান করেন। তাইলে আমার ছাগলের সমেসসায় দোষ কুথায়?
-তোর সমস্যা সমাধান করি ঠিক আছে কিন্তু ছাগলের সমস্যার সমাধান কিভাবে করবো? আমি কি পশু ডাক্তার?  
-আপনি ডাক্তার না হলেও অনেক কিছু পারেন।
-যাহ, তুই পশু ডাক্তারের কাছে
-গুরু, গ্যাছিলাম। বলে, জবাই করে খেয়ে ফেলতে।      

বুঝতে পারছি, নুরা পাগলা তার ছাগলের মমস্যার সমাধান না নিয়ে আমাকে ছাড়বে না। তাই তাড়াতাড়ি মুক্তি পেতে জিজ্ঞেস করলাম,
-কি হয়েছে ছাগলের?
-কি আর বলবো। গতকাল ছাগলডা থানা থেইকা ছাইড়া আনছি
-বলিস কী! ছাগল থানায় ধরে নিয়েছিল?
-হ' আপনিই ক'ন, ছাগল কি রাজনীতি বুঝে?
-বুঝে না ঠিক। তবে অনেক ছাগলই কিন্তু রাজনীতি করে। যাইহোক, তোর ছাগলের অপরাধ কি ছিল?
-গুরু, দুডা নুকা মার্কা পোস্টার খাইছিলো

একথা শুনে অবাক হয়ে বললাম,
-বলিস কি? পোস্টার!
-হ' গুরু। থানা থেইকা মুসলেইকা দিয়া ছাইড়া আনছি। বলছে, আরেকবার পুস্টার খাইলে ছাগলডার সাথ আমারেও খাইয়া ফেলবো।
-ঠিক আছে, আর যাতে পোস্টার না খায় সেটা খেয়াল রাখিস
-সমেসস্যা ত সেইখানে না
-তাহলে সমস্যা কোনখানে?
-ছাগল ঘাস, লতাপাতা কিচ্ছুই খাচ্ছেনা
-ওরে, থানায় গিয়ে হয়ত শোক পেয়েছে। সেই শোক কেটে গেলে দুদিন পর এমনিতেই খাবে।
-লতাপাতা খাচ্ছে না তবে নুকা মার্কা পুস্টার দেখলে খাইতে যাচ্ছে
-বলিস কিরে, আজব ব্যপার!
-গুরু, সেজন্যি ট্যানশনে আছি 

আমি নুরা পাগলারে আশস্ত করে বললাম,
-পাগলে কিনা বলে থুক্কু করে ছাগলে কিনা খায়। একদম টেনশন নিবি না
-গুরু, একটা টেটমেন্ট দেন
-ট্রিটমেন্ট কি দিবো! আমি কি ডাক্তার?
-অতকিছু বুঝি না। আমার ছাগলডারে বাঁচান

আমি ছাগলটির জন্য কি করা যায় ভাবতে থাকি। এমনিতেই সবুজ গাছপালা এই শহরে নেই বললেই চলে, যেটুকু ছিল একটি নির্দিষ্ট পোস্টারে ঢেকে গেছে। অনেকদিন সবুজ লতাপাতা দেখে না।    

মনে মনে চিন্তা করে দেখলাম, ছাগলটার ওই একি পোস্টার দেখতে দেখতে মগজে মধ্যে হয়তো ছবিটা ডিফল্ট হয়ে গেছে। পোস্টার খাওয়ার প্রতি সেজন্যে এতো ঝোঁক ছাগলের। নুরা পাগলারে বললাম,
-তোর ছাগলটা পোস্টারিজম রোগে আক্রান্ত।
-এইটা আবার কি রুগ?
-অনেকটা ক্ষমতা ভোজনের মত। একবার সে স্বাদ পেলে যেমন কেউ ছাড়তে চাইনা। ঠিক তেমনই এই রোগ।    

এবার নুরা পাগলা একরাজ্য বেদনাহত কন্ঠে বলল,
-আমার ছাগলড়া কি ভালা হবেনা?

অবশ্যই হবে। বলে, পত্রিকা থেকে কেটে রাখা ঝিনাইদহের ডাক্তার কাশমিম সুজনের 'নৌকায় ভোট দিন' নৌকার ছবিসহ একটা প্রেসক্রিপশন নুরা পাগলার হাতে দিয়ে বললাম,
-এইনে, ধর
-এইটা কি? 
-তোর ছাগলের প্রেসক্রিপশন
-গুরু, ওসুধ ত ল্যাখা নাই  
-ওষুধ লাগবেনা, শুধু প্রেসক্রিপশনটা ফটোকপি করে দিনে দু'বেলা খাওয়াবি।
-ধন্যবাদ গুরু...



Comments

জনপ্রিয় ব্লগসমূহ

ইবলিশ শয়তান

প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা

একটি চশমা ও কলমের গল্প

আলাদিনের দৈত্য

কাঙ্গালি ভোজ

মুরগী কবির

জন্মদিনের সারপ্রাইজ

এ তালা ভাঙবো কেমন করে

কাছে আসার গল্প

ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ