কাছে আসার গল্প
জানুয়ারি ২০১৪ সাল। ডিজিল্যাবে আমার চাকরি হয়। মিরপুর-১০ এর ডিজিল্যাবে পহেলা ফেব্রুয়ারিতে জয়েন্ট করব, এই শর্তে চাকুরির এ্যাগ্রিমেন্টপত্রে সাইনও করেছি। আরেকটি জব ধানমন্ডি-১৫ তে। কাজী ফার্ম লিঃ এর দীপ্তটিভিতে "রাইটার" হিসেবে ট্রেনিং করতেছি।
এজন্য ধানমন্ডি-২ এর 'পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ' এর প্রধান শাখায় যেখানে বর্তমানে কর্মরত আছি, সেখানে চাকুরী হতে অব্যাহতি চেয়ে পহেলা জানুয়ারিতে রিজাইন লেটার দিয়েছি। চলছে কোনমতে, একজন স্বপ্নভঙ্গ ছেলের জীবন যুদ্ধের মহা সংগ্রাম।
তাই প্রচন্ডরকমের ব্যস্ততা। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২.৩০মিনিট পর্যন্ত দীপ্তটিভিতে, যদিও ৫টা পর্যন্ত থাকার কথা। আর বিকেল ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত 'পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ' এর প্রধান শাখায় শিফটিং ডিউটি করছি। তারপরও রাতে বাসায় ফিরে রাত জেগে দীপ্তটিভি'র জন্য ল্যাপটপে এসাইন্টমেন্ট তৈরি করতেছি।
এতো সব ঝামেলার মধ্যে আরও একটি বিষয় হুট করে যুক্ত হলো। এই বিষয়টি সম্পূর্ণ মা বাবার পছন্দের উপর ছেড়ে দিয়ে ছিলাম। তারা পছন্দ করেছেন। আমিও ছবি পাঠাতে বললাম। আমার ছোটভাই ছবিগুলো জিমেইল করে পাঠালো। নন-সিনেম্যাটিক জীবনের এই অবহেলা ও অবজ্ঞার মানুষটি যখন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখে গেছে। তখন নিজেকে ঠকিয়ে লাভ কি?
অফিসে ব্যস্ততার কারনে ছবিগুলো দেখতে পারলাম না। রাতে বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া সেরে ছবিগুলো দেখবো এইভেবে ল্যাপটপ ওপেন করলাম। হঠাৎ মনে পড়লো, আগামীকাল এসাইন্টমেন্ট জমা দেওয়ার ডেট। রাতের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। সেই পেরেশানিতে ছবি দেখার কথা বেমালুম ভুলে গেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে তড়িঘড়ি করে দীপ্তটিভি'র অস্থায়ী কার্যালয় কাজী ফার্মের অফিসে গিয়ে ফোনের সুইচ অফ করে দিলাম। দুপুর আড়াইটার দিকে অফিস থেকে বের হয়ে ফোন অন করতেই ছোটভাই ফোন দিল। বলল, সকাল থেকে অনেকবার টাই করছি। বললাম, কি হয়েছে? ও বলল, গতকাল তোকে যে ছবিগুলো পাঠিয়েছি তা দেখে তো কিছুই বললি না। বললাম, ছবিগুলো তো দেখি নাই। রাতে বাসায় গিয়ে দেখে জানাবো। ও জোর দিয়ে বলল, রাতে না তুই আজ দিনের মধ্যে জানাবি। আমাকে কনভেন্স করে আরও বলল, তারা আজই ডিসিশন চাইছে। পারলে এখুনি দেখে জানা। ঠিক আছে জানাচ্ছি, বলে ফোন কেটে দিলাম।
তিনটায় কর্মস্থলে গেলাম। আমার ডিপার্টমেন্টের এক কলিগ বড়ভাই বলল, এডমিন ম্যানেজার স্যার ফোন দিয়ে আপনার খোঁজ করেছিল। বললাম, কখন? উনি বলল, আড়াইটার দিকে। আমার ব্যাকাপে দুটো চাকরি ঝুলছে তাই একটু ভাবের সহিত বললাম, তিনটায় আমার অফিস। আড়াইটায় ফোন দিলে কি পাবে?
সেই কলিগ বড়ভাইকে ম্যানেজ করে অফিস থেকে বের হলাম। যদিও অফিসের আইটিরুমে ছবিগুলো দেখতে পারতাম কিন্তু ব্যক্তিগত প্রাইভেসির কারনে বাসায় গিয়ে দেখাটাই শ্রেয় মনে হলো। বাসায় ল্যাপটপে মডেম দিয়ে নেট চালায়। তাই বাসার দিকে রওনা দিলাম।
ভাগ্যে বুঝি এটাই ছিল; বাসায় এসে দেখি, আমার ফ্ল্যাটে পাশের রুমে যে ছেলেটি থাকতো সে তার ব্যক্তিগত তালা তার রুমে না দিয়ে সদর দরজায় লাগিয়ে বের হয়ে গেছে। কি আর করা, বাসায় ঢুকতে পারলাম না। এরমধ্যে বাড়ি থেকে একের এক ফোন আসছে, রিসিভ করছি না।
একটি রেস্টুরেন্টে বসে কিছুক্ষন ভাবলাম। দুচোখ বন্ধ করে জীবনের চাওয়া-পাওয়ার সমীকরণ মেলাতে শুরু করলাম। এরপর একে একে পরিবারের সবাই ফোন দিলাম। ছোটভাই, বোন, দুলাভাই ও ছোট্ট ভাগ্নে-ভাগিনাকে ফোন দিয়ে তাদের অভিমত জানলাম। সবশেষে ফোন দিলাম বাবাকে। বাবার সাথে কথা বলে তারপর সর্বশেষ কথা হয়, আমার মায়ের সাথে। আম্মার খুব পছন্দ হয়েছে শুনে আমি বললাম, যেখানে তুমি পছন্দ করেছো, সেখানে আর আমার দেখার প্রয়োজন নেই।
সংসার পরম ধর্ম মেনে নিয়ে, স্বচক্ষে না দেখেই বাবা মায়ের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে, অবশেষে রাজি হয়ে গেলাম। সেই দিনই আমার বাসায় বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। '১৭ই জানুয়ারী' বিয়ের শুভদিন ধার্য্য করে আমাকে জানিয়ে দেয়। আমি ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে দেখি, হাতে মাত্র এক সপ্তাহ আছে।
হয়তো কাকতালীয়, নয়তো খোদা তায়ালার লিখন ছিল! ঐদিনই রাতের বেলা এডমিন স্যার আমাকে ফোন দিলেন, তার রুমে যেতে। আমি স্যারের রুমে গেলাম। স্যার বলল, আপনার বিষয় নিয়ে এমডি স্যারের সাথে কথা বলেছি। আপনি রিজাইন লেটার উইথড্র করে বেতন বৃদ্ধির এ্যাপ্লিকেশন দিন। আপনার বেতন বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
আমি সেই রাতেই রিজাইন লেটার উইথড্র করে বেতন বৃদ্ধির এ্যাপ্লিকেশন দিলাম। অত্র প্রতিষ্ঠানে আজ অব্দি পর্যন্ত আছি। শুকুর আলহামদুলিল্লাহ।
এই আধুনিক যুগে বিয়ের আগে না দেখে, না কোন কথা বলে সরাসরি বিয়ের পিঁড়িতে গিয়ে বসেছিলাম। সেই সময়ে আমাকে দেখে দীপ্তটিভি'র আমাদের রাইটিং ওয়ার্কশপের ট্রেইনার কলকাতার জনপ্রিয় লেখক ও চিত্রনাট্যকার কল্লোল লাহিড়ী'দা বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেছিল, কলিযুগের নজিরহীন ঘটনা!
যাইহোক, জীবনের অজস্র ভুলের মাঝে বাবা মায়ের পছন্দের মানুষটিকে জীবনসঙ্গী করাটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে পারফেক্ট সিদ্ধান্ত। আমি একটা সম্পূর্ণ নতুন জীবনে অবগাহন করলাম।
আজ সেই শুভদিন। যেদিনে রচিত হয়েছিল আমাদের 'কাছে আসার গল্প'।।
God bless you...
ReplyDeleteThanks
ReplyDelete