জন্মদিনের সারপ্রাইজ

জন্মদিনের সারপ্রাইজ
অনেকদিন ধরে অফিসের এক কলিগ একটা জীবন বীমা করানোর জন্য পিছে লেগেছিল। তখন আমি সায় দেয়নি। কারণ, আমার সঞ্চয় করার মত অবস্থা ছিলনা। যে টাকা মাসে বেতন পেতাম। তা দিয়ে বাসা ভাড়া, থাকা-খাওয়া ও বাড়িতে পাঠিয়ে উদ্বৃত্ত তেমন থাকতো না। কোনমতে সচ্ছলতায় দিন পার চলছি, সেইসাথে জীবন যুদ্ধে নিজেকে একটু একটু করে তৈরি করছিলাম।       

হুট করে আব্বা-মা আমার বিয়ের জন্য মেয়ে পছন্দ করে। ঠিক সেই সময়ে, এতটাই ব্যস্ত হয়ে গেলাম। একটু স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিবো, সে উপায়ও নাই। হাতে তখন দু-তিনটা চাকরির অফার চলে আসে। যার একটিতে জয়েন্ট করেছি, আরেকটিতে ট্রেনিং করছি আর বর্তমানটায় ডিউটি করছি। রাতে বাসায় ফিরে একটু চোখ বুজবো, সেটাও পারছিনা। দীপ্ত টিভির রাইটিং ওয়ার্কশপের এসাইনমেন্ট তৈরি করতে হচ্ছে। 

এরমধ্যেই সেই মেয়ের ছবি আমাকে দেখানোর জন্য ইমেইল করে। ব্যস্ততায় সেই ছবি দেখার কথা বেমালুম ভুলে গেলাম। আমাদের আত্মীয় হয়, সেই সুবাদে অনেকদিন আগে তাকে একবার যদিও দেখেছিলাম কিন্তু সেটা মনে নাই। বাড়ি থেকে চাপাচাপি করায়, ছবি দেখতে বাসায় গেলাম। বাসায় ল্যাপটপে মডেম দিয়ে নেট চালায়। বাসায় গেছি কিন্তু রুমে ঢুকতে পারি নাই। দেখি, সদর দরজায় রুমমেটের ব্যক্তিগত তালা। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি, বাবা মায়ের পছন্দের'ই বিয়ে করবো। তাই ছবি না দেখে, না কথা বলে চোখ বুজে 'হ্যাঁ' বলে দিলাম।

এটাই হয়তো খোদা তায়ালার লিখন ছিল। সেদিন রাতেই বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে আমাকে ফোনে জানিয়ে দেয়, আগামী সপ্তাহে বিয়ে। তার কিছুক্ষণ পরই আমার অফিসের এডমিন ম্যানেজার স্যার ফোন দিয়ে বলে, 'আপনি এপ্লিকেশন দিন, বেতন বৃদ্ধির।' আমি রিজাইন লেটার দিয়েছিলাম, সেটা উইথড্র করে বেতন বৃদ্ধির এপ্লিকেশন দিলাম। 

বিয়ের পরের মাস থেকেই আমার বেতন বেড়ে যায়। বিয়ের সময় কিছুটা দেনা হয়েছিলাম। সেই দেনা কাটিয়ে উঠার পর হাতে টাকা জমতে শুরু করে। তখন ভবিষ্যতের কথা ভেবে টাকাপয়সা সঞ্চয়ের চিন্তাভাবনা করলাম। একটি জীবন বীমা করতে সেই কলিগকে সম্মতি দিলাম।

আমার সে কলিগ অফিসেই জীবন বীমার সকল কাগজপত্র নিয়ে আসলো। আমি আমার সব ইনফরমেশন দিতেছি, আর সে লিখতেছে। নমিনীর জায়গায় বউয়ের নাম দিয়েছি। বউয়ের ইনফরমেশন দিতে গিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম। তার জন্ম তারিখ তো জানিনা? 

তড়িঘড়ি করে বউয়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে বললাম,
'এই তোমার জন্ম তারিখ টা বলো তো' 
একথা শুনে বউ বলল, 'কেন, কি হয়েছে?' বললাম, 'আগে বলো তারপরে বলছি।'

বউ একটু ভেবে ১০-১০-১৯.. বলতেই বললাম, 
'এই দাঁড়াও, আজই তো ১০ই অক্টোবর! মানে, আজ তোমার জন্মদিন।' 
সাথেসাথে উইশ করলাম, 'হ্যাপী বার্থডে টু ইউ।' 

সে পুরোদমে সারপ্রাইজড! সেই সাথে আমিও সারপ্রাইজড হয়েছি, এমন ভাবে উইশ করে।

এটাই সত্যি, এই মানুষটি আমার জীবনের আর্শীবাদ স্বরুপ। যাকে বিয়ের মাধ্যমে আমার জীবনের মোড় ঘুরেছে। এরপর কখনো আমাকে আর পিছু তাকাতে হয়নি।

সেই মানুষটিকে আজকের জন্মদিনে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা। শুভ হোক তোমার আগামীর পথচলা। ভরপুর হোক সুখ, আলোকিত হোক পৃথিবী।।

Comments

জনপ্রিয় ব্লগসমূহ

ইবলিশ শয়তান

প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা

একটি চশমা ও কলমের গল্প

আলাদিনের দৈত্য

কাঙ্গালি ভোজ

মুরগী কবির

এ তালা ভাঙবো কেমন করে

কাছে আসার গল্প

ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ