নুরা পাগলা গবেষণা ইনিস্টিউট
অনেকদিন ধরে নুরা পাগলার খবর নাই। নুরা পাগলার খবর জানতে অনেকেই আমাকে ইনবক্স করেছেন। কেউ কেউ আবার ফোনও দিয়েছেন। এখন পরিচিত কারো সাথে দেখা হলে সবার আগে নুরা পাগলার খবর আগে জানতে চাই।
তো নুরা পাগলার বাসায় গিয়ে আমি পুরাই অবাক! বাসায় এক বিরাট সাইনবোর্ড ঝুলছে। সেখানে লেখা আছে "নুরা পাগলা গবেষণা ইনিস্টিটিউট"।
আমি গুটিগুটি পায়ে গবেষণা কেন্দ্রে প্রবেশ করলাম। নুরা পাগলা একটা যন্ত্র নিয়ে গবেষণা করছে। সেই যন্ত্রটি আমি আবহাওয়া অফিসে দেখেছিলাম। যার নাম এনিমোমিটার। বায়ুর স্প্রীড মাপার যন্ত্র। গলায় খাঁকারি দিয়ে বললাম,
-কিরে, আমি এসব কি দেখছি?
আমার কণ্ঠ শুনে নুরা পাগলা অবাক হয়ে ছুটে এসে বলল,
-গুরু, আপনি!
-অনেকদিন তোর খোঁজখবর নেই, তাই এলাম।
-গুরু, আপনিও আমার খোঁজখবর রাখেন!
-রাখবো কেন?
-না মানে, আমার মত পাগল ছাগলের খবর কেউ রাখে?
-পাগল বটে, তবে তুই ভবের পাগল
-ঐ একি। তা গুরু কি মনে করে এসেছেন?
-তোর গবেষণা দেখতে এসেছি
-ও তাই! তাহলে দেখুন
-হঠাৎ ভিক্ষা ছেড়ে, গবেষক বনে চলে গেলি কিভাবে?
-গুরু, সবই চেতনা মেশিনের সুফল। দেশ উন্নতি করেছে, এখন ভিক্ষা কেউ দেয় না। তাই কিছু করে খাওয়ার চেষ্টা আর কী...
-উন্নতি কে বলছে? উন্নয়নশীল হতেই এখনো অনেক বছর বাকি আছে।
-গুরু, সে জন্যি গবেষণা শুরু করেছি
-কি নিয়ে গবেষণা করছিস?
-যে বিষয় নিয়ে কেউ গবেষণা করেনি আমি সেই বিষয় নিয়ে গবেষণা করছি
-বাহ! ভালো একটা কথা বলেছিস। তা নতুন গবেষণাটা কি?
-গুরু, মানুষের পায়ু পথের বায়ু
-কি বলিস! পাদ?
-হ' পাদ। মানে, মিথেন গ্যাস
নুরা পাগলা জাতে পাগল হলেও তালে ঠিক আছে। সে নিশ্চয় কোন লজিক বের করেছে। তাই এই নিয়ে গবেষণা করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-দেশের উন্নয়নের সাথে তোর গবেষণার সম্পর্ক কি?
-আছে, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের মানুষকে মহাকাশে বসবাসের ব্যবস্থা করছি
-কস্কি'রে পাগলা? এতো জায়গা থাকতে মহাশূন্যে কেন?
-গুরু, যেভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাতে পৃথিবীর ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তাছাড়া চাঁদ ও মঙ্গলগ্রহ মানুষের বসবাসের এখনো উপযোগী নয়।
-বুঝছি, তাই মহাশূন্য বেছে নিয়েছিস
-হা, আর এজন্যই পাদ নিয়ে গবেষণা করছি
-একটু ঝেড়ে কাঁশ তো...
-আমাদের পেট মানে পরিপাকতন্ত্রের নানান ভেল্কিবাজিতে পেটের অভ্যন্তরে যে মিথেল গ্যাস প্রস্তুত হয়, সেটাই হচ্ছে পাদ। এই পাদ যদি মানুষ দিতে না পারতো, তাহলে পেটে মিথেল গ্যাস জমে যেতো। তখন মানুষ মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে মহাশুন্যে উড়ে বেড়াতো।
-ওরে পাগলা! তুই কি বলছিস?
-ভেবে দেখলাম, মিথেন গ্যাসের অপার সম্ভাবনাময় এদেশ। এই গ্যাস ব্যবহার করে বৃহত্তর জনগোষ্ঠিকে মহাশুন্যে পাঠিয়ে দিয়ে দেশের বিপ্লব ঘটাবো।
-এতো গ্যাস পাবি কোথায়?
-গুরু, এদেশের নেতা-নেত্রীরা প্রতিদিন টকশোতে যে পরিমাণ মিথেন গ্যাস ছাড়েন। তার একভাগ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে মানুষ মহাশুন্য থেকে ঘুরে আবার ফিরে আসতে পারবে।
আমি ওর এই আইডিয়া শুনে পুরাই তব্দা খেয়ে গেলাম। কতক্ষন তব্দা ধরেছিল জানি না। হুশ ফিরে দেখি, নুরা পাগলা গবেষণা কক্ষে এক ভুঁড়িওয়ালা লোককে বসিয়ে ভুঁড়িভোজ করাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম,
-লোকটি কে?
নুরা পাগলা উত্তর দিল,
-জানি না, রাস্তা থেকে ধরে এনেছি
-বাহ! ধরে এনে এমন জামাই আদর করছিস?
-করতেছি, গবেষণার জন্য
-লোকটি কি করবে?
-মিথেন গ্যাসের রিডিং দিবে
আমি অবাক হচ্ছি, সেইসাথে নুরা পাগলার কর্মকান্ড দেখছি। ভুঁড়িভোজের পর ভুঁড়িওয়ালা লোকটির পাছার কাছে ধরলো এনিমোমিটার। আর কানে স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে লোকটির পেটে জমে থাকা গ্যাসের গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজ শুনছে। দু/তিন ঘন্টা হয়ে গেছে অথচ এনিমোমিটার কোন রিডিং দিচ্ছে না। নূরা পাগলা টেনশনে পড়ে গেলো। যন্ত্র চেক করে দেখলো ঠিক আছে। কিন্তু কেন এনিমোমিটার কোন রিডিং দিচ্ছে না? একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে নূরা পাগলা লোকটিকে জিজ্ঞেস করল,
-আপনি মানুষ না আ'মীলীগ?
অনেকক্ষন কৌতুহল চেপে রাখা লোকটি বলে উঠে,
-মানুষ হইতে যামু কন দুক্ষে, আমি আওয়ামীলীগ
-করেন কি?
-আবে হ্লা, আমি রাজনীতিবিদ
একথা শুনে নুরা পাগলা ক্ষেপে গিয়ে বলল,
-ধুর মিয়া, আগে কইবেন না। এনিমোমিটার মুখের কাছে ধরতাম।।
Comments
Post a Comment
আপনার মূল্যবান মতামত দিন