অদ্ভুত কিসিমের মানুষ

'আজকের প্রজন্ম' এর সেমিনার শেষ করে রাতে বাসায় ফিরছিলাম। পুরানা পল্টন থেকে যে বাসে চড়েছি সে বাসের যাত্রী ছিল হাউজফুল। আমার পাশের জানালার ধারে বসা যাত্রী বাংলা মটরে এসে নামতেই একজন মহিলা যাত্রী বাসে উঠলেন। আমি উনাকে দেখে আমার সিট ছেড়ে দিয়ে পাশের জানালার ধারের সিটে বসতে যাবো, এমন সময় পিছনে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা এক মুরব্বী চাচা বলল, 'বাবা আমি অন্ধ মানুষ। আমাকে বসতে দিবে?'  

একথা শুনে আমি সাথেসাথেই উঠে দাঁড়িয়ে উনাকে বসতে দিলাম। যদি আমি আগেই উনাকে খেয়াল করতাম, তাহলে আগেই বসতে দিতাম। যাইহোক, উনাকে জানালার ধারের খালি সিটে বসিয়ে, আমার সিটে ওই ভদ্রমহিলাকে বসতে বললাম। ঠিক সেই সময়ে হুট করে এক অদ্ভূত কিসিমে’র লোক এসে আমার সেই সিটে বসে পড়লো।
তার দুহাত জুড়ে গাঁদাফুলের মালা প্যাঁচানো, চুলে কাটিং গলাছিঁলা মুরগীর মত, পরনে লুঙ্গি ও গায়ে গোল গলার গেঞ্জি। সেই গেঞ্জির সামনে আবার সানগ্লাস ঝুলিয়ে রেখেছে। চাহনিটাও অদ্ভূত ক্যাবলাকান্ত টাইপের মত ফ্যালফ্যালে...! 

আমি তাকে বললাম, 'এইযে ভাই উঠেন। এই ভদ্রমহিলাকে বসতে দিন।' সে কোন কথা না বলে চুপ করে বসে থাকে। আমি তাকে আবারও বললাম, 'ভাই, উঠেন।' তবুও সে নিশ্চুপ। পাশের সিটে বসা অন্ধ মুরব্বী চাচাও বলল, 'উঠেন। মহিলাকে বসতে দিন।' তারপরও সে চুপচাপ বসে থাকে। ভদ্র মহিলাটিও উচ্চস্বরে বলল, 'উঠেন, উঠেন, বসতে দিন।' তবুও সে নিশ্চুপ বসে থাকে।

বাসের মধ্যে সবাই যখন একযোগে তাকে উঠতে বলল তখন সে অদ্ভূত চাহনিতে উঠে দাঁড়িয়ে চুপ করে পেছনের সিটের গিয়ে দাঁড়ালো। তবুও সে কোন কথা বলল না। 

ভদ্রমহিলা একটু রাগিতস্বরে সিটে বসতে বসতে বলল, 'কোত্থেকে যে এসব লোক আসে।' আমিও উনার কথার সাথে তাল দিয়ে আস্তে করে বললাম, 'মনে ত হচ্ছে নেশাখোর!' 

লোকটি আমার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল। রাস্তার শব্দদূষণ ও বাসের মধ্যে চিৎকার চেচামেচির মাঝে সে নেশাখোর কথাটি ঠিকই শুনে ফেলে। 

এতোক্ষণ কোন কথা না বললেও নেশাখোর শুনে সে চেতে গিয়ে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দেয়। তখন বাসের সবাই বুঝতে পারে সে আসলেই নেশাখোর। যাত্রীরা বিরক্ত তাকে জোর করে বাস থেকে নামিয়ে দিল।

আমি তখন একটি কথায় উপলব্ধি করলাম,  আমরা বড়ই অদ্ভূত মানুষ। যে কাজটি গর্হীত বা সমাজের চোখে খারাপ, সে কাজটি আমরা করতে পছন্দ করি। কিন্তু শুনতে পছন্দ করিনা।