ভ্যান রাখার যাদুঘর


অফিসের বিশেষ কাজে ধানমন্ডি-২ এর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেডের প্রধান শাখায় গেছিলাম। শ্যামলী থেকে বেশি দূরে নয় কিন্তু যানজটের কারণে সময় এতটাই লেগে যায় যে, এই সময়ের মধ্যে চাঁদে গিয়ে ফিরে আসা যাবে। তো যানজটের সমুদ্র পাড়ি দিয়ে অবশেষে পৌছালাম। 

কাজ সেরে ফেরার পথে সাইন্সল্যাবটরীর মোড়ে এসে দাঁড়ায় বাসের জন্য। এখানে এসে পুরাই থ' মেরে গেলাম।একটা বাসও নেই, রাস্তা পুরা ফাঁকা। আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি, আমার সাথে অনেক আম-পাব্লিকও দাঁড়িয়ে আছে বাসের অপেক্ষায়। আমাদের দাঁড় করিয়ে রেখে, প্রায়ই আধা ঘন্টা পর হুইসেল বাঁজিয়ে কোন এক মন্ত্রীমহোদয় চলে যান। 

ভাগ্যিস, সেদিন প্রধানমন্ত্রী বা উজিরে খামখা রাষ্ট্রপতি যাননি।তাহলে রাস্তায় দাঁড়ানো সুযোগও থাকত না, খেদিয়ে সবাইকে কোন এক মাইনকা চিপায় দাঁড় করে রাখত ঘন্টা পর ঘন্টা।


মন্ত্রী সাহেব যাওয়ার পর, বানের পানির মত আটকে থাকা বাস গুলো আসতে শুরু করে। সবাই বাসে উঠার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করে দিলো। আমি প্রচন্ড ভিড় ঠেলে উঠলাম একটি লোকাল বাসে। বাসে যাত্রীর ভিড়ে কোনমতে ইঞ্জিল কভারে একটু বসার সুযোগ পেলাম। একটু আয়েশ করে মোবাইল বের করে ক্যান্ডি ক্যাশ খেলা শুরু করলাম। কিন্তু সেই সুখ বেশিক্ষণ সইলো না। এক ইয়া মোটা এক মহিলা যাত্রী প্রায় জোর করেই বাসে উঠলেন। বসলেম এসে ঠিক আমার পাশে। উনি বসাতে আমি বেলুনের মতো চুপসে গেলাম, মাইনকা চিপায় পড়ে। উঠে দাঁড়াতে গেলাম, কিন্তু আমার সামনে দাঁড়ানো একযাত্রী থামিয়ে ইশারায় বুঝালেন যে কষ্ট যতই হোক বসেই থাকুন। এমুহূর্তে দাঁড়ানোর  কোন উপায় নেই।

কি আর করা, অগত্যা চেপে গেলাম। বাস কলাবাগান এসে সেইরাম জ্যামে আটকে পড়ে কোন নড়াচড়ার নাম নেই। যাত্রীরা বসে হায় হতাশ করছে। কেউকেউ সরকারের চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছে। শুরু হয়ে গেলো বাসের মধ্যে রাজনৈতিক আলাপ। আলোচিত টপিক, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ভ্যান। 

একযাত্রী বলে উঠল, ভাই ভ্যান তো যাদুঘরে যাচ্ছে। আরেক যাত্রী বলল, তাইলে থালা-বাটি, এমনকি বাথরুমের বদনা কি দোষ করল। তত্তক্ষনে বাস কলাবাগান ছেড়ে ৩২ নম্বর সিগন্যালে আটকে গেছে। কানের কাছে উনাদের ভ্যান নিয়ে ভ্যাঁণ ভ্যাঁণ শুনে বিরক্ত হয়ে বললাম, আপনারা এখানে নামেন।

তাদের একজন অবাক হয়ে বলল, কেন?
বললাম, 'ঐযে প্রধানমন্ত্রীর বাসা। বলেন গিয়ে যেন উনি নিজেই যাদুঘরে গিয়ে আমাদের একটু স্বস্তি দেয়।'

সেমূহুর্তে সবার কৌতূহলী দৃষ্টি দেখি আমার দিকে। তখন আস্তে করে বললাম, 'উনি যেন ট্রেনে না চড়েন। কারণ, ট্রেন রাখার মত অত বড় যাদুঘর আমাদের নাই।'






Comments

জনপ্রিয় ব্লগসমূহ

ইবলিশ শয়তান

প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা

একটি চশমা ও কলমের গল্প

আলাদিনের দৈত্য

কাঙ্গালি ভোজ

মুরগী কবির

জন্মদিনের সারপ্রাইজ

এ তালা ভাঙবো কেমন করে

কাছে আসার গল্প

ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ