দৈনিক ফেসবুকে
একদিন গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেছি। আমায় দেখে এক পরিচিত মুরব্বি চাচা প্রশ্ন করলেন,
-শুনলাম, তুমি নাকি লেখালেখি করো?
-চাচা, এই টুকটাক চেষ্টা আর কী
-তা বাবাজী, কোন পত্রিকায় লিখো?
-'দৈনিক ফেসবুকে'
আমার চটজলদি উত্তর শুনে অবাক হয়ে বললেন,
-এইটা আবার কোন পত্রিকা?
-চাচা, এইটা পত্রিকা না। সোস্যাল নেটওয়ার্কে লিখি।
-তাহলে 'দৈনিক' বললে কেন?
-দৈনিক'ই লিখি। তাই বলেছি...
-আচ্ছা! তা, কি লিখো। গল্প না কবিতা?
-চাচা, এসব কিছুই লিখি না
-তাহলে লিখো কি?
-স্ট্যাটাস লিখি
-স্ট্যাটাস! সেতো খান্দানী ব্যাপার-স্যাপার। লেখা যায় নাকি?
-চাচা, সেই খান্দানী ব্যাপারই ফেসবুকে মামুলি ব্যাপার।
-বুঝেছি, তা তোমার লেখার বিষয়বস্তু কী?
-চাচা, 'শান্তি মলম'
শিক্ষিত চাচা বুঝতে পেরে ইয়ার্কির সুরে বললেন,
-কবিরাজি, ভালোই করছো তাহলে?
-জ্বী চাচা, ঘুণেধরা সমাজের রন্ধে রন্ধে চুলকানি-বিখাউজ। কবিরাজি না করে উপায় আছে।
-শুনেছি, তোমার শান্তিমলমে নাকি লোকের গা জ্বলে?
-দাদ-একজিমা গোষ্ঠীর লোক হলে কিছুটা জ্বলে...
-তাহলে শান্তি কোথায়?
-আছে তো
-কই?
-চাচা, এইযে চুলকিয়ে দিয়ে মজা দিই
-বলো কি?
-সেইরাম আরাম। তবে চুলকানির শেষে একটু জ্বলুনি হয়
খুব আগ্রহের স্বরে চাচা বললেন,
-তোমার শান্তি মলমের নাম কি?
-চাচা, 'নজরুল কবীর'
-কোথায় পাবো?
-চাচা, গুগলে সার্চ দিলেই পাবেন
-গুগল তোমার নামও জানে?
-জ্বী চাচা, সার্চ দিন।
আবার যখন গ্রামে গেছি, সেই চাচার সাথে দেখা। আমায় দেখে মুখ কালো করে বললেন,
-তোমার চাচির মোবাইলে লেখাগুলো দেখেছি। যত্তসব ফালতু লেখা। পড়ে গাঁ জ্বলে...
-জ্বী, আমি জানি
-জানো, তাহলে লেখো কেন?
-ভালো লাগে
-তোমার ভালো লাগা, কারো জন্য দাঁতের ব্যথার কারণ
-কেন, কি হয়েছে?
-তোমার ছাঁইপাঁচ লেখা পড়ে তোমার চাচি দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছে।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। চাচা দাদ-একজিমার লোক। তাঁর লেখা পড়ে জ্বলুনি হওয়া স্বাভাবিক কিন্তু চাচির দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছে। এটা মানা যায় না। দূর্বোধ্য লেখা আর লিখবো না। এই ভেবে মিন মিনিয়ে বললাম,
-চাচির, দাঁত ভাঙলো ক্যামনে?
-আর বলোনা, হাসতে হাসতে কখন যে মাড়ির দাঁত খুলে পড়ে গেছে টেরই পায় নাই।।
Comments
Post a Comment
আপনার মূল্যবান মতামত দিন