পাগলের লাইসেন্স দাবী

রাস্তার মধ্যে ছোটখাটো জটলা বেঁধে গেছে। কিছুলোক আন্দোলন করছে। তাদের আন্দোলনের শ্লোগান শুনে বুঝতে পারলাম, আন্দোলনটা ভোটের দাবীতে নয়; নিরাপদ সড়ক চাই তাও নয়; আবার কোন প্রেমিকের ভালবাসার দাবীর আন্দোলনও নয়। এই আন্দোলনটা হলো, পাগল হওয়ার দাবীর আন্দোলন।

কৌতুহলী হয়ে, ভিড় ঠেলে এগিয়ে গেলাম। দেখি, বেশ কয়েকজন পাগল রাস্তা ব্লক করে মাঝখানে জট পাকিয়ে বসে আন্দোলন করছে। আর একজন নেংটি পড়া পাগল উচ্চস্বরে শ্লোগান দিচ্ছে,
"সুস্থ থাকা সমাধান নয়, 
চল সবাই পাগল হই।
পাগলামীর কোন বয়স নাই, 
পাগল হওয়ার লাইসেন্স চাই"।

পাগলের লাইসেন্স দাবী
আসলেই তো, পাগল হওয়ার লাইসেন্স চাই! পাগলদের একটি যুক্তিযুক্ত দাবী। এখন সবখানে সবকিছুতেই যেহেতু লাইসেন্স লাগে। অথচ পাগলের কোন লাইসেন্স নাই। এটা ভারী অন্যায়। আমি পাগলদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করলাম।  

একজন পাগল নেতার মত গর্জে উঠে ভাষণ শুরু করে দিলো, 
"মাননীয় পাগল সমাজের ভাই ও বোনেরা। আজ আমরা মর্মাহত, লজ্জিত। সেই পাগলদের জন্য যারা লাইসেন্স ছাড়া পাগলামী কথাবার্তা বলে। যে কেউ পাগলামী করবে, পাগলামী কথাবার্তা বলবে, এটা মানা যায়না। পাগল হলেও আমাদের একটা সন্মান আছে। সেটা কেউ কলঙ্কিত করুক, তা হতে দেবো না। সবকিছুর একটা নীতিমালা থাকা দরকার।

তারপর একটু দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করে,
সংগ্রামী পাগল ভাই ও বোনেরা। পুরান পাগল ভাত পায় না, নতুন পাগলের আমদানি হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, বলেন ইসি। প্রবাসীদের বিয়ে করবেনা, বলেন ওসি। বেকারদের বিয়ে করবেনা, কে বলে জানেন? ডিসি। আর, দশ টাকায় চা সিঙ্গাড়া চমুচা পাওয়া যায়, বলেন ভিসি।

এই অকর্মার ঢেঁকির পাগলগুলো লাইসেন্স ছাড়া কথা বলে। যা আমাদের পুরা পাগল সমাজের জন্য অসন্মানজনক। তাই আমাদের প্রাণের দাবী, লাইসেন্সবিহীন আর একটিও কথা বলতে পারবেনা। আমরা বলতে দিবো না, না...

সেইমুর্হূতে একসুরে পাগলদের শ্লোগান ওঠে। দুনিয়ার পাগল, এক হও। জয় পাগলা, পাগলার জয়....

আমি শ্লোগান শুনতে শুনতে হাঁটা দিলাম। চারিদিকে যেভাবে পাগলামী চলছে, তা দেখে সেইসাথে পাগলামী কথাবার্তার ঠেলায় দেশের বাকি লোকজনেরও পাগল হওয়ার দশা হয়েছে।

গতকাল দেখলাম, শুরু হয়েছে একাদশ জাতীয় সঙ'সদ! সরি সংসদ অধিবেশন। যেখানে সরকারী দল নৌকা মার্কায় জয়ী, বিরোধী দলও নৌকা মার্কায় জয়ী।
জয়ী বললে ভুল হবে, পরাজয়ী। ভোট ডাকাতির সংজ্ঞা আমার জানা নেই।

সুতরাং সংসদের ডানে নৌকা, বামে নৌকা। যে বিল উত্থাপন করবে সেও নৌকা, ঐ বিলের যে বিরোধিতা করবে সেও নৌকা। বিল পাস করার জন্য টেবিল চাপড়াইবে সেও নৌকা আবার মুখ গোমরা করে বসে থাকবে সেও নৌকা।

হীরক রাজার বাংলাদেশে এসব কান্ডকারখানা দেখে  সুস্থ মানসিকতার লোকেরও পাগল হওয়া ছাড়া ভালো থাকার উপায় নাই।।

Comments

জনপ্রিয় ব্লগসমূহ

ইবলিশ শয়তান

প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা

একটি চশমা ও কলমের গল্প

আলাদিনের দৈত্য

কাঙ্গালি ভোজ

মুরগী কবির

জন্মদিনের সারপ্রাইজ

এ তালা ভাঙবো কেমন করে

কাছে আসার গল্প

ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ