ছবি আঁকার সুপ্ত প্রতিভা

ছবি আঁকার সুপ্ত প্রতিভা
দুষ্কৃতকারী চক্র আমার বিকাশ একাউন্টটি ডিজেবল করে দিয়েছিল। একাউন্টটি এক্টিভেট জন্য কল্যানপুর মিজান টাওয়ারের দোতলায় বিকাশ পয়েন্টে গেছি।

প্রতিদিন যে সার্ভিসের মাধ্যমে কোটিকোটি টাকা লেনদেন হয়, বিকাশের সেই কাস্টমার সার্ভিস ব্যবস্থার এতো বাজে অবস্থা, না গেলে জানতাম না। সার্ভিস পয়েন্টে নাই এয়ারকুলার, নাই সিরিয়ালের জন্য টোকেন সিস্টেম। মান্ধাতা আমলের হাজিরা খাতায় নাম লেখা দিলাম। হাজিরা খাতায় নাম ধরে ডেকে ডেকে সার্ভিস দিতেছে।

ভিতরে প্রচন্ড গরমে থাকতে না পেরে বাহিরে এসে পাশের রেস্টুরেন্টে বসে অনেক ক্ষণ এসির বাতাস খেলাম। তারপর গিয়ে দেখি, সিরিয়াল অনুসারে নাম ডাকা বন্ধ করে দিয়ে, যাদের সিরিয়াল ওভারটেক হয়েছে তাদের নাম ডাকা শুরু করে দিয়েছে। আমি বাঁধা দিয়ে বললাম, 'আপনি সিরিয়াল অনুসারে ডাকুন, যারা বাদ পড়েছে তাদের সার্ভিস শেষে দিবেন।'

আমার প্রতিবাদে কাজ হয়েছে। সিরিয়াল অনুসারে ডাকতে শুরু করে। ৬৩ নাম্বারের শেষে ৬৪,৬৫,৬৬ কেউ উপস্থিত নাই। আমার ৬৭ নাম্বার সিরিয়াল। যাক, এতোক্ষণে বাঁচা গেলো। ভ্যাপসা গরমে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।

আমার অভিযোগ শুনে কাস্টমার সার্ভিস থেকে বলল, 'বিকাশ কারো একাউন্ট বন্ধ করেনা।' যাইহোক, আমার একাউন্টটি ওপেন করতে চাইলাম। কাস্টমার সার্ভিস অফিসার বলল, 'ভোটার আইডি আছে?' 'আছে' বলে সঙ্গে থাকা স্মার্টকার্ডের ফটোকপি দিলাম। দেখে বলল, 'এটাই না। আগের ভোটার আইডির ফটোকপি দিন।'

'আগের পুরনো কার্ড কোথাও পাবো? সেটা তো এখন স্মার্টকার্ড হয়ে গেছে।' একথা বলতেই কাস্টমার সার্ভিস থেকে বলল, 'ঠিক আছে, আপনার একাউন্টের টাকার পরিমাণ বলুন।' বললাম। 'দুটা লেনদেনের টাকা পরিমাণ বলুন।' তাও বললাম। তারপর আমার কাছে পাসপোর্ট সাইজের ছবি চাইলো। এইবার পড়লাম বিপদে। ছবি তো সঙ্গে নাই। বলল, 'ছবি ছাড়া একাউন্ট ওপেন করা সম্ভব না।'   

এখন কি করব? ফিরে গিয়ে ছবির ব্যবস্থা করতে হবে। তারমানে, এতক্ষণ সময়ের নষ্ট করে দাঁড়িয়ে থাকাটা বিফলে যাবে, এটা মেনে নেওয়া যায়না। মানিব্যাগের মধ্যে চিরুনী অভিযান পরিচালনা করলাম। সবকিছু তন্নতন্ন করে খুঁজে এক চিপার মধ্যে একখানা পুরনো সাদাকালো ছবি পেলাম। সেই ছবিখানা মানিব্যাগের চিপায় লেপ্টে থেকে পুরাই সাদা হয়ে গেছে। চোখমুখ কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। তাৎক্ষণিক, আমি কলম দিয়ে চোখ মুখের আকৃতি দিলাম।

আমার ছবি আঁকাআঁকির রপ্তটা পেয়েছি, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে। উনারা আমারে এমন একখান জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ছিলেন। যেখানে আমার ছবি আমি নিজেই চিনতে পারিনা। ফটোকপি মেশিন চিনবো কিভাবে? তাই আইডি কার্ডটি ফটোকপি করলে চোখমুখ আমাকে আঁকিয়ে দিতে হতো। সেই থেকে একটু আধটু এক্সপেরিয়েন্স হয়েছে, এই আর-কী।

আমি ছবিখানার চোখমুখ আঁকিয়ে কাস্টমার সার্ভিস অফিসারকে দিলাম। তিনি অবাক হয়ে দেখে বলল, এটা দিয়ে হবেনা। বললাম, 'চেষ্টা করে দেখুন।' আবারও বলল, এটা দিয়ে হবেনা। আমিও বললাম, 'চেষ্টা করতে দোষ কি?' 'ঠিক আছে' বলে তিনি সবকিছু লিখে, ফর্মসহ জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি স্ক্যান করে বিকাশের হেড অফিসের সার্ভারে মেইল করে দিলো। তারপর বলল, 'আপনার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আসবে। ওয়েট করুন। যদি আসে তাহলে একাউন্ট ওপেন হয়েছে, না আসলে হয় নাই।'

আমি অপেক্ষায় বসে আছি। ১০মিনিট পার হয়ে যায়, ম্যাসেজ আসেনা। কাস্টমার সার্ভিস অফিসাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'ভাই ম্যাসেজ তো এখনো দিলনা?' তিনি উত্তর দিলেন, 'আরেকটু অপেক্ষা করুন। অন্তত ১৫ মিনিট পর্যন্ত।'

অবশেষে কাঙ্ক্ষিত ম্যাসেজ এলো। আমার বিকাশ একাউন্টটি ওপেন করলাম। আমার আঁকা ছবিতে কাজ হয়েছে। তাই মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম, ইলেকশন কমিশনকে। উনাদের জন্যই আজ আমি নিজের ছবির অঙ্কনশিল্পী। তা না হলে, আমার মধ্যে এমন সুপ্ত প্রতিভা আছে! ঝানতাম'ই না....

Comments

জনপ্রিয় ব্লগসমূহ

ইবলিশ শয়তান

প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা

একটি চশমা ও কলমের গল্প

আলাদিনের দৈত্য

কাঙ্গালি ভোজ

মুরগী কবির

জন্মদিনের সারপ্রাইজ

এ তালা ভাঙবো কেমন করে

কাছে আসার গল্প

ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ