একটি দূর্ঘটনা
বিপদ আমার পিছু ছাড়ছেই না। একটা বিপদ কেটে উঠতে না উঠতেই আরেকটা বিপদ ঘাড়ের ওপর গরম নিঃশ্বাস ফেলছে। জানিনা আমার ভাগ্যে কি লেখা আছে? কেন এমন নিষ্ঠুর খেলা খেলছে বিধাতা?
পাবনা থেকে লিচু ও আম কুরিয়ার করেছে। বিকেল ৫টায় এসএ পরিবহণ থেকে ফোন করে জানিয়ে দিলো, 'আপনার একটা পার্সেল এসেছে।' আমি বললাম, 'আপনাদের অফিস খোলা কয়টা পর্যন্ত?' বলল, 'রাত দশটা পর্যন্ত।' ঠিক আছে রাত সাড়ে ন'টার দিকে আসছি বলে ফোন রেখে দিলাম।
রাত ন'টায় অফিস থেকে বের হয়ে একটা রিক্সা নিলাম। ইঞ্জিন চালিত অটো রিক্সা ঢাকার শহরে চলাচল নিষিদ্ধ কিন্তু এই লকডাউনে বাস চলাচল না থাকায় প্রচুর এই রিক্সার দৌরাত্ম্য বেড়েছে। ব্যাটারি চালিত এই রিক্সাগুলো ঢাকার প্রতিটি রাস্তায় এখন দাপিয়ে চলছে। পঙখিরাজের মত উড়ে অল্প সময়ে মধ্যে নিদিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে।
মিরপুর-১০ এ অবস্থিত এসএ পরিবহন থেকে আমার পার্সেলটি বাসায় পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত এ রিক্সাটি রিজার্ভ করি। রিক্সা চালকের বয়স বেশি না। সম্ভবতঃ বাসের হেল্পার অথবা লেগুনার ডাইভার হবে। লকডাউনে বাস-লেগুনা না চলায় অটোরিক্সা ধরেছে। ফাঁকা রাস্তায় রিক্সা সেইমতন গতিতে চালাচ্ছে। আমি তারে বললাম, 'ভাই একটু আস্তে যান।' সে কিছুক্ষণ আস্তে চালিয়ে আবার স্প্রীড বাড়িয়ে দেয়।
রাস্তায় মেট্রোরেলের কাজ হচ্ছে। উন্নয়নের জোয়ারে রাস্তার পুরোটাই খানাখন্দ, কোথাও কোথাও বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যাওয়া পথে দেখেশুনে গেলেও পার্সেলটি নিয়ে আসার সময় চালক বেসামাল ভাবে ফুল স্পিডে রিক্সা চালাতে থাকে। আমি মানা করতে না করতেই ভাঙ্গা গর্তে চাকা পড়তেই দূর্ঘটনা ঘটে যায়।
আমি রিক্সা থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে যায়। রিক্সাও ছুটে আমার গায়ে এসে পড়ে। রিক্সার নিচে পড়ে ছেঁচড়ে যায়। আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে রিক্সার নিচ থেকে আমাকে উদ্ধার করে। আমার হাতপা টেনে মালিশ করতে থাকে। কিছুক্ষণ আমার সেন্স ছিলনা। সেন্স ফিরে পেতেই দেখি, লোকজন রিক্সাওয়ালাকে মারধর করছে। আমি মারতে নিষেধ করলাম। যা হবার হয়ে গেছে, মারলে তো আর সব উঠে আসবেনা। আমার শরীরের অনেক জায়গায় কেটে ছুঁলে গেছে। ডান পা মারাত্মক ভাবে জখম হয়েছে তবে ভাঙেনি। হাটু ও মাজা দারুণ ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। আমাকে ধরে দ্রুত পাশের ওষুধের দোকানে নিয়ে যায়। সেখানে আমার ক্ষতস্থান পরিস্কার করে ওষুধপত্র দিয়ে আরেকটা রিক্সায় তুলে দেয়।
ওই রিক্সাটি ভেঙে গেছে, তবে চালকের তেমন কিছু হয়নি। আমি তাকে রিক্সা ভাড়াটা দিয়ে আসি। ইচ্ছে করছিল, রিক্সা মেরামতের খরচ দেয় কিন্তু দেয়নি। এটা ওর জন্য শাস্তি।
বিপদে পড়া মানুষের উদ্ধার তৎপরতায় এ জাতির সত্যিই জুড়ি নাই। আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া যে রাস্তায় তখন চলন্ত আর কোন যানবাহন ছিলনা। তাহলে আরও বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো।
Comments
Post a Comment
আপনার মূল্যবান মতামত দিন