ভোট ধর্ষণ

ভোটের আগের দিন সন্ধা বেলায়। আমার এক বন্ধুর দোকানে বসে চার-পাঁচজন বন্ধু আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা ফোনে আমার সেই বন্ধুটি উঠে গেলো চায়ের অর্ডার দিয়ে। আমাদের চা খাওয়া শেষে বন্ধুটি এসে পকেট উঁচু করে দেখিয়ে বললো, এই দেখ ভোটের টাকা পেয়েছি। আমি বললাম, কত পেয়েছিস? বললো, তুই সাংবাদিক বলা যাবেনা।

নির্বাচনের চা খাবো না এইশর্তে চা ও টা'য়ের বিল আমিই দিলাম। আড্ডা শেষে বের হয়ে দেখি, একটা চায়ের দোকানে পুলিশেরা বসে চা খাচ্ছে। তার পাশেই ফটকা পোলাপান ভোটের টাকা নিয়ে শোরগোল করছে। বুঝতে পারলাম, সরকারি টাকার সদব্যবহার হচ্ছে।

ভোটের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুনতে পেলাম। সব কেন্দ্রে রাতেই ভোট হয়ে গেছে। বাকি আনুষ্ঠানিকতা উলঙ্গ ভাবে সকাল বেলা করছে। বিরোধী পোলিং এজেন্টদের বেশির ভাগই হাজতে বন্ধী। যে ক'জন ছিল তাদের হুমকি হামকি দিয়ে বের করে দিয়ে পুলিশের সহযোগীতায় খুব শান্তিপূর্ণ ভাবে ওপেন ভোটগ্রহণ চলছে। কেন্দ্রের ভিতর কোন গোপনীয়তা নাই। সম্মুখে ভোট দিন, না হলে আরামসে চলে যান।

ভোট ধর্ষণ
ভোট ধর্ষণ 
১০ বছর পর ভোট দিবো। এই ভোট দিতেই গ্রামে এসেছি। সেই ভোটটা যদি দিতে না পারি তাহলে ৫ বছরের জন্য দুঃখবোধ থেকেই যাবে। আমার গনতান্ত্রিক অধিকার অন্যকেউ হরণ করবে, এটা মেনে নেওয়া যায়না। ভোট দিতে কেন্দ্রের দিকে হাঁটা দিলাম। সবাই ভোট না দিয়ে ফিরে আসছে। আমাকে যেতেও নিষেধ করলো অনেকেই। বললো, যেয়ে লাভ নাই; ভোট একপেশে নৌকায় সিল মেরে নিচ্ছে। বললাম, ভোট যখন দিতে এসেছি ভোট দিয়েই যাবো।

আজব দেশ! সবক্ষেত্রে এমনকি এখন ট্রেনের টিকিট কাটতেও জাতীয় পরিচয়পত্র লাগে অথচ যেটার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় পরিচয়পত্র। সেই ভোটের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র লাগেনা। শুধু ভোটারের টোকেন লাগে। আর ভোটের টোকেন শুধুমাত্র একটি প্রতীকের লোকজনই দিচ্ছে। সামান্য ভোটের টোকেন নম্বর দেওয়ার জন্যও বিরোধী দলের লোকজনকে বসতে দেওয়া হয়নি।

আমি টোকেন নম্বর সংগ্রহ করে ভোট দিতে কেন্দ্রে গেলাম। ভোট কেন্দ্রে কোন সারিবদ্ধ লাইন নাই। কিছু জটলা ভোটগ্রহণের দরজার সামনে, দু'একজন ছাড়া ঘুরেফিরে তারাই ভোট দিচ্ছে। একজন মুরুব্বি চাচাকে দেখলাম, কেঁদে বের হয়ে গেলো। আমার পাড়ার এক বাল্যবন্ধু ভোট না দিয়ে বের হয়ে আমাকে ধরে টানতে টানতে বলে, 'চল ভোট দেওয়ার দরকার নাই। ভোট ওদের সামনে দিতে হবে। আমি দেয় নাই। ব্যালট পেপার নিয়ে বের হয়ে এসেছি।'

জিদ তখন চরম পর্যায়ে, আমি ভোট দিবোই। ঘৃণা আর প্রতিবাদস্বরূপ ওদের সামনেই আমি আমার ভোটটা দিবো। দরজার কাছে গেলাম। ভিতর দিয়ে উঁকি দিলাম, ব্যালট পেপার ছেঁড়ার আগেই সিল মেরে দিতেছে।

আমি ভোট দিতে ভিতরে ঢুকিলাম। আমার বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে কালি দিলো। সই করার টাইম না দিয়ে টিপসহি নিলো। মানিক নামের এক ছেলে (পরে জেনেছি, ঘৃণার অক্ষরে লিখে রাখলাম) আমার ব্যালটে সিল মারতে যাবে তখনই ব্যালটটি আমার হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলাম। জোরপূর্বক আমাকে বলতে লাগলো, 'এখানেই আপনাকে সিল মারতে হবে।' আমি সম্মুখে সিল মারতে যাবো ঠিক তখনই ব্যালট টি কেড়ে নিয়ে নৌকায় সিল মেরে দিলো। আহ!!!

আমার ভোটটি ধর্ষিত হয়ে গেলো। আমার চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হলো না। বুকের ভিতর কান্না হুহুকরে উঠে....

আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া
করিতে পারিনি চিৎকার!
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া
করিতে পারিনি চিৎকার!!
বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার!!!

Comments

জনপ্রিয় ব্লগসমূহ

ইবলিশ শয়তান

প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা

একটি চশমা ও কলমের গল্প

আলাদিনের দৈত্য

কাঙ্গালি ভোজ

মুরগী কবির

জন্মদিনের সারপ্রাইজ

এ তালা ভাঙবো কেমন করে

কাছে আসার গল্প

ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ