নুরা পাগলা যখন ছিনতাইকারী

নুরা পাগলা যখন ছিনতাইকারী
অফিস থেকে রাতে বাসায় ফিরছিলাম। ল্যাম্পপোস্টের স্বল্প আলোতে তাকিয়ে দেখি, নুরা পাগলা এক লোকের মাথায় পিস্তল তাক করে বলছে,
-আমি ছিনতাইকারী নুরা মাস্তান। তাই বলে আতঙ্কিত হবেন না। নিজের ওপর আস্থা রাখুন। বড় বড় শ্বাস নিন। ধীরে ধীরে আপনার মূল্যবান জিনিসগুলা আমার সামনে বাহির করুন।

ভদ্রলোকটি প্রাণের ভয়ে দ্রুত মোবাইল ও মানিব্যাগ বের করে নুরা পাগলার সামনে ধরলো। নুরা পাগলা মোবাইলটা হাতে নিয়ে গোয়েন্দাদের মতো নেড়েচেড়ে বলল,
-ক্যামেরা কত মেগাপিক্সেল?

লোকটি ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল,
-ফ..ন্টে আট, ব্যা..কে তেরো মেগা..পিক্সেল

নুরা পাগলা মোবাইলটা নাড়াচাড়া করতে করতে  বলল, 
-শোনেন, ডেইলি যত এক্সিডেন্ট হয়। তার অর্ধেকই এই ফোনের কারনে। তাই ফোনটা রেখে দিলাম।

লোকটি কোন প্রতিক্রিয়া নাই। নুরা পাগলা তার মানিব্যাগটা পরখ করে বলল,
-মানিব্যাগ এত মোটা ক্যান? ভিজিটিং কার্ড দিয়ে ভরে রাখছেন, দেখছি। মোটা মানিব্যাগ পিছে রাখলে ব্যাকসাইডে প্রব্লেম হয়, বুজছেন?

এবার লোকটি উত্তর দিল,  
-বু..ঝছি

নুরা পাগলা পরামর্শ দিয়ে বলল,  
-কার্ড রাখার জন্য কার্ডহোল্ডার পাওয়া যায়। কিনে নিয়েন। এখন যান।

ভদ্রলোকটি সব খুইয়ে চুপচাপ হেঁটে চলে যাচ্ছে দেখে তাকে আবার ডাক দিল নুরা পাগলা। লোকটা কাছে আসতেই বলল,
-শুধু দিয়েই যাবেন। কিছু নেবেন না?
-আচ্ছা, দিন
-শোনেন, একটা ফ্রি উপদেশ দিই। রাস্তায় চলার সময় ফোনে কথা বলবেন না।
-জ্বী, আচ্ছা
-আর এই কার্ডটা রাখেন। ঝালমুড়ি খাওয়ার সময় কাজে লাগবো।

ভদ্রলোক ভিজিটিং কার্ডটি হাতে নিলো। কার্ডটিতে লেখা আছে, 'নুরা পাগলা' বিশিষ্ট ছিনতাইকারী। কার্ডটি পকেটে ঢুকিয়ে লোকটি আবার হাঁটা দিল। নুরা পাগলা আবারও তাকে ডেকে বলল,        
-দাঁড়ান, কার্ডটা দিয়ে আবার ঝালমুড়ি খেয়ে ফেলা দিয়েন না। সঙ্গে রাখবেন। ভবিষ্যতে কাজে দিবে। পরবর্তীতে দেখা হলে, কার্ডটি দেখাবেন। কিছু ডিস্কাউন্ট পাবেন।

ভদ্রলোকটি চলে যেতেই আমি সেখানে উপস্থিত হলাম। আমাকে দেখে নুরা পাগলা অবাক ও বিষ্মিত হয়ে বলল,
-গুরু! আপনি?
-তোকে দেখে এলাম। এ পেশা কবে থেকে শুরু করেছিস?
-গুরু, মিথ্যে বলবো না। আজকেই প্রথম।
-ছিঃ আমি ভাবতে পারছিনা...
-কি করবো, গুরু? পেটটা খাইতে চায়।
-তাই বলে ছিনতাই করবি?
-গুরু, দেশের উন্নতি হইছে শুনি কিন্তু আমগোর উন্নতি কই?
-উন্নতি তো হয়েছে, আগে চেয়ে চিন্তে খাইতি! এখন ছিনতাই করে খাচ্ছিস! এটা উন্নতি না...
-মজা লন গুরু, এখন আর কেউ ভিক্ষা দেয় না। তাই বাধ্য এই পেশা বাইচা নিছি
-অস্ত্র পেলি কোথায়?
-কিস্তিতে নিছি
-বাহ! আজকাল কিস্তিতে অস্ত্রও পাওয়া যায়?
-জ্বী, ময়মনসিং থেকে একখান আনছি

একথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। তারপর বললাম,   
-পুরো দেশটায় যখন ছিনতাইকারীর কবলে তখন তোকে আর কি বলবো, চালিয়ে যা। কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হবে...
-গুরু, জুতা খোলেন
-কেন?
-একটু ধুলা মাড়াইতেন। আমি সেই ধুলা নিতাম। এই পদধুলি আরকি...
-থাক দরকার নেই। তুই একটা কাজ কর
-গুরু, কি কাজ?
-যারা উন্নয়নের মুলা জনগনে সামনে ধরে শুধু নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটায়। তাদের এই অস্ত্র ধরে আনতে পারবি?
-কি করবেন?
-কিস্তিতে থাবড়াইতাম

বিঃদ্রঃ- বাংলাদেশ প্রতিদিনের একটা নিউজ পড়েছিলাম। ময়মনসিংহে কিস্তিতে অস্র পাওয়া যাচ্ছে। দেশে কতটা সুশাসন থাকলে টিভি, ফ্রিজের মতো অস্ত্রও কিস্তিতে পাওয়া যায়?
তবে কিস্তিতে এটুকু স্বস্তি, এখন কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে কেউ আর আত্মহত্যা করবে না।।

Comments

জনপ্রিয় ব্লগসমূহ

ইবলিশ শয়তান

প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা

একটি চশমা ও কলমের গল্প

আলাদিনের দৈত্য

কাঙ্গালি ভোজ

মুরগী কবির

জন্মদিনের সারপ্রাইজ

এ তালা ভাঙবো কেমন করে

কাছে আসার গল্প

ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ