সোনার বালা

আমার গিন্নী একটা আজব কিসিমে’র মানুষ। তার হাতের জিনিসপত্র উধাও হওয়ার একটা বাতিক আছে। এই যেমন, হাতের আংটি, কানের দুল উধাও হয়ে যাওয়া। নাকফুল ড্রেসিংটেবিলের উপর খুলে রাখছে তো মূহুর্তের মধ্যে সেটা উধাও। 

এবার ঈদে মেয়ের জন্য দুটা ড্রেস কিনেছি। তার একটা উধাও। ওয়ারড্রব, ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ার তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাওয়া যায়নি। হয়তো মার্কেট থেকে কিনে মার্কেটেই রেখে আসা হয়েছে। তবে আমার গিন্নীর মতে, সে বাসায় এসে বাচ্চাকে পড়িয়েছে। অতপর উধাও।

ঈদের পরের দিন। বাড়ি ভর্তি আত্মীয়-স্বজনের সমাগম। ছোটভাইয়ের পরিবারের নতুন অতিথির আগমনের উপলক্ষে ছোটখাটো অনুষ্ঠান চলছে। সবকিছু সুন্দরভাবে হয়েছে।

বিপত্তি ঘটলো সন্ধ্যার দিকে, হঠাৎ গিন্নী খেয়াল করে তার ডান হাতের 'সোনার বালা' উধাও। 

আজব একটা ব্যাপার। সারা বাড়ি তছনছ করে খোঁজা হলো। কিন্তু কোথাও নাই। দুঃখ ভারাক্রান্তে মনে গিন্নী আমার চেষ্টা করে কোথায় কোথায় গিয়েছিল সারাদিন। বাম হাতের বালা আছে। শুধু ডান হাতের টা উধাও৷ তারমানে, ডান হাতে কোনকিছু ছুড়ে মারতে গিয়ে হয়তো পড়ে যেতে পারে।

মনে পড়েছে, সন্ধ্যার একটু আগে বাচ্চার মেঝেতে পায়খানা করেছিল। বাচ্চার হাগু পুরান প্যান্টসহ মুছে বাড়ির পিছনে পুকুরে ছুড়ে মেরেছে। তারমতে, নিশ্চয়ই সেই হাগুর সাথে হাতের বালাটাও পুকুরে পড়ে গেছে।

শুরু হলো, শুকনো পুকুরের অভিযান। রাতের বেলা পুকুর পাড়ে ঝোপঝাড়ে টর্চ লাইট দিয়ে সার্চ করেও পাওয়া গেলো না। তবুও গিন্নী নিশ্চিত হয়ে বলছে, বালা পুকুরেই পড়েছে। দিনের আলোতে খুঁজলেই পেয়ে যাবে। তবে আমার মতে, এটা উধাও হয়তো হয়েছে দুপুরে, কিছুতেই সন্ধ্যেবেলায় পুকুরেতে নয়।

আমাদের বাড়ি থেকে কিছুদিন আগেও একখান এলইডি মনিটরের টিভি উধাও হয়েছে। দেখার কেউ নাই, তাই হয়তো টিভিখানা নিজেই মনে দুঃখে দিন-দুপুরে হাওয়া বনে উধাও হয়ে গেছে। 

তো পরেরদিন ভোরে সূর্য ওঠার আগেই গিন্নী আমার ঠিকই ওঠে গেছে পুকুরে পাড়ে বালা খুঁজতে। অবশেষে খুঁজে  না পেয়ে রুমে এসে বেশ কিছুক্ষণ কেঁদেকেটে নিজেই নিজেকে স্বান্তনা দিল। গতকাল মেয়েটা স্ট্যান্ডফ্যানের মধ্যে আঙুল ঢুকে গিয়েছিল। আঙুল কিছুটা ছুঁলে গেলেও মারাত্মক কোন দূর্ঘটনা ঘটে নাই। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে। যাক, বালা হারিয়ে সেই ফাঁড়া কেটে গেছে।

সন্ধ্যায় আমার গিন্নী সাঁঝবাতি জ্বালিয়ে রুমের পিছনের জানালার পর্দা সরিয়ে কপাট আটকাতে গিয়ে 'ও আম্মা' বলে চিৎকার দিল। আম্মা রান্নাঘর থেকে ছুটে গেলো। আমিও পাশের রুম থেকে ছুটে গেলাম। অবাক কান্ড 'সোনার বালা' জানালার গ্রীলের সাথে ঝুলছে।

সাবাশ, অবাক বিস্ময়ে বউ চেয়ে রয়! দেখি, মনুষ্যত্বের জয় আর ষড়রিপুর চরম পরাজয়।

কেউ হয়তো বালাটা পেছনের জানালা দিয়ে নিরাপদে গ্রীলের সাথে রেখে গেছে। 
যাইহোক, অকল্পনীয় ভাবে উদ্ধার হওয়া 'সোনার বালা' হাতে পেয়ে বউয়ের মুখে খুশির ঝিলিক। ঠিক যেমন, মাঝরাতে ঈদের চাঁদ দেখার মতো।।

সোনার বালা

Comments

জনপ্রিয় ব্লগসমূহ

ইবলিশ শয়তান

প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা

একটি চশমা ও কলমের গল্প

আলাদিনের দৈত্য

কাঙ্গালি ভোজ

মুরগী কবির

জন্মদিনের সারপ্রাইজ

এ তালা ভাঙবো কেমন করে

কাছে আসার গল্প

ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ