রান্নাবাড়া
ওষুধ ছিটালে উত্তরের মশা দক্ষিণে যায়, আর দক্ষিণের মশা উত্তরে যায়! তেমনই আমিও দৌড়ের উপর আছি। ব্যস্ততা এতোটাই, প্রিয়া সাহার গুম হওয়া সংখ্যালঘু সংখ্যার চেয়েও বেশি হবে। 'ডেঙ্গু ছেলেধরার মতো গুজব’ বলে সিডি চালিয়ে মেয়র সাব বসে থাকলেও আমার একমুহূর্ত বসে থাকার অবসর নাই।
ডেঙ্গুর প্রকোপে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রুগীর উপচে পড়া চাপে হিমশিম খাচ্ছে। সেইসাথে রোগ নির্ণয়ের প্রতিষ্ঠানে কাজের চাপ বাড়ছে প্রচন্ডরকমের। গত সপ্তাহ থেকে সকাল ৯টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত একটানা অফিস করছি। রাত দুটায়/আড়াইটায় বাসায় ফিরতেছি। এইটা আমার পক্ষে কেমনে সম্ভব হচ্ছে, জানিনা। তবে মানুষের সেবায় নিয়জিত আছি, এটাই বড় কথা।
এদিকে বাসায় গিন্নী নাই। গ্যাস্টিকের কারণে হোটেলের খাবার খেতে পারিনা। গিন্নীর রান্না করে দেওয়া ফ্রিজের খাবারও শেষ। তাই ব্যাচেলরের মত ডিম আনি, ডিম খাচ্ছি।
ম্যানেজার স্যারকে বললাম, 'স্যার, গিন্নী না থাকায় খাওয়াদাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে।' স্যার আমার ও আমার সহকারীর জন্য অনুরাগের চিকেন বিরিয়ানির ব্যবস্থা করলো। আয়োজনটা একদিনের জন্য হলো, তারপর আর কোন আওয়াজ নাই। আমিও সাইলেন্ট মুডে গিয়ে ধুমসে কাজ করে যাচ্ছি।
আবার বাসায় এসে নিজের হাতে রান্না করেও খাচ্ছি। সাতসকালের মধুর ঘুম হারাম করে বাজারে গেছি। বাজার থেকে ডিম না কিনে, নিয়ে এলাম আস্ত মুরগী। বাসায় এসে দেখি, অফিসের সময় হয়ে গেছে। তাই মুরগীর শুধু দুটা রান কেটে তেলে ভেজে, কোনমতে পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে রেঁধে, না খেয়ে বক্সে নিয়ে ছুটলাম অফিসে।
শুক্রবারে হাতে কিছুটা সময় পেলাম। রান্না করার জন্য মুরগীটা ফ্রিজ থেকে বের করলাম। কাটতে গিয়ে দেখি, মুরগীর পেটের মধ্যে নাড়িভুঁড়ি। এদেখি, তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদের মত জায়গা রেখে অজায়গা পরিস্কার করছে। ওমনি'ই মুরগীটা পলিথিনের মধ্যে ভরে ছুটে গেলাম, সেই মুরগীর দোকানে। বললাম, 'গতকাল এই মুরগীটা নিয়েছিলাম। ছিঁলে পরিস্কার করে দিতে বলেছিলাম। এই দেখেন, পেটের মধ্যে নাড়িভুঁড়ি।'
মুরগীওয়ালা মুরগীটা হাতে নিয়ে দেখে বলেন, 'নাড়িভুঁড়ি কই? এইটা ত গিলা-কলিজা।'
বললাম, 'ওই একি জিনিস। কেটে পরিস্কার করে দিন।'
মুরগীওয়ালা খুশি হয়ে গিলা-কলিজা কেটে রেখে দিলো। তারপর কসাইয়ের দোকান গেলাম। টাকা দিয়ে মুরগীটা কেটে টুকরো করে নিয়ে এলাম। ইউটিউবে মুরগী রান্নার রেসিপি দেখে রান্না শুরু করলাম। পাক্কা রাধুনির মত রান্না শেষে চেখে দেখি, ঝালের বাহার ছুটছে। এতো ঝান খাওয়া যাবেনা। কি করি এখন?
ইউটিউবে সার্চ দিয়ে বেশ কয়েকটা আইডিয়া পেলাম। তারমধ্য একটা হল, আলু কেটে দেওয়া। কিন্তু বাসায় আলু তো নাই। আরেকটি অপশন পেলাম, চিনি ছিটিয়ে দেওয়া। ব্যস, চিনি আছে। চিনি ছিটিয়ে দিলাম। চিনি ছিটালে ঝাল কোন দিকে যায়, উত্তরে না দক্ষিণে বুঝার জন্য টেস্ট করলাম। ওমা, তিতা লাগছে। চিনির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেলো নাকি?
কেয়ামতের আলামত শুরু হয়ে গেছে। মিঠা চিনি তিতা হয়ে গেছে। ওদিকে সিটি কর্পোরেশনের ওষুধের কার্যকারিতাও নষ্ট হয়ে গেছে। ওষুধ ছিটালে মশারা মরে না, উড়ে উত্তর-দক্ষিণে যায়।
ফলশ্রুতিতে, রাজধানীতে ডেঙ্গুর মহামারী চলছে। নারায়ণগঞ্জের সাংসদ (আল্লামা) শামীম ওসমান বলেছেন, 'নমরুদ যখন অনাচার করছিল, তখন তাকে থামাতে আল্লাহ একটা মশা তার নাক দিয়ে ঢুকিয়ে দেন। মশা দিয়ে আল্লাহ তাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। যখন কোনো দেশে পাপাচার হয়, তখন এটাই ন্যাচারাল গজব।’
ফলশ্রুতিতে, রাজধানীতে ডেঙ্গুর মহামারী চলছে। নারায়ণগঞ্জের সাংসদ (আল্লামা) শামীম ওসমান বলেছেন, 'নমরুদ যখন অনাচার করছিল, তখন তাকে থামাতে আল্লাহ একটা মশা তার নাক দিয়ে ঢুকিয়ে দেন। মশা দিয়ে আল্লাহ তাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। যখন কোনো দেশে পাপাচার হয়, তখন এটাই ন্যাচারাল গজব।’
কথা সত্য, তবে এদেশের নমরুদটা কে? তিনি কি দেশে আছেন? নাকি বিদেশের অবস্থান করছেন? তাকে খুঁজতে গিয়ে পেয়ে গেলাম লবণের কৌটা। তারমানে, আমি ভুল রান্নায় চিনির বদলে লবণ দিয়ে ফেলেছি.....
যাইহোক, ঝাল আর লবণের কম্বিনেশনে রান্নাটা খুউব ট্যাশ হয়েছিল। ডেঙ্গুবন্ধু মেয়রদ্বয়কে খাওয়াতে পারলে কষ্টটা স্বার্থক হতো।।
Comments
Post a Comment
আপনার মূল্যবান মতামত দিন