ভোট দিমু দিনে না রাতে?

আমি সাধারণত মোবাইলের ম্যাসেজ দেখি না। বিভিন্ন অফারের আজাইরা ম্যাসেজ না দেখেই ঠাশঠাশ করে ডিলিট মারি। তো ম্যাসেজ ডিলিট মারতে গিয়ে একটি ম্যাসেজ দেখে থমকে গেলাম। 

ঢাকা উত্তরে মেয়র আতিকুল সাহেবের ম্যাসেজ। যিনি নয় মাস আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র হয়েছিলেন। ম্যাসেজটি হলো 'আতিকুল ইসলামকে ... ভোট দিন। উন্নয়নের অংশ নিন।'

ম্যাসেজটি পড়ে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। আতিক সাহেব ভোট দিতে বলেছেন ঠিক আছে। কিন্তু ভোট দিনে দিবো না রাতে দিবো তা কিছুই বলেন নি। 

এর আগে নির্বাচনের সময়, আতিক সাহেব জনগনকে সকাল সকাল নিজ নিজ বাসা থেকে গরম খিচুড়ি খেয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে বলেছিলেন। এবার এখনো সেরকম কিছু বলেন নি। তবে এবার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আছে। তাই আশা করবো, আপনি ক্লিয়ার ম্যাসেজ দিবেন। আমি রাতে ডিনার সেরে উন্নয়নের ঢেঁকুর তুলে ভোট দিতে যাবো।

রাতে ভোট দেওয়ার আমার খুবই শখ। গতবছর রাতে আমার চাচাতো ভাই ক্রিকেটার ব্রায়ান লারার ৪'শ ষ্টেটের রানের রেকর্ডটা ভেঙ্গে দিয়েছে ভোট দিয়ে। সে রাতে একাই ৫'শ ভোট দিছে। 

ভোট দিয়ে এসে সকালে আমাকে বলল, 'ভাই, তোর কাছে প্যারাসিটামল আছে।' বললাম, 'জ্বর না মাথা ব্যথা?' বলল, 'হাত ব্যথা। রাতে ভোট দিয়ে হাত ব্যথা হয়ে গেছে।' তাই আগেই এক পাতা প্যারাসিটামল কিনে রেখেছি। এবার আমি রাতে ভোট দিবো, সকালে প্যারাসিটামল খাবো।

মনে আছে মেয়র সাহেব, আপনি ঝকঝকা ফকফকা রাস্তায় ময়লা ফেলে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার অভিযান চালিয়ে ছিলেন। আমি দেখে অবাক হয়েছি, কিন্তু দুঃখ পায়নি। আপনি সারা ঢাকার শহরে ময়লা ছিটিয়ে রাখতেই পারেন৷ কারণ, আপনি তো কারো ভোটে নির্বাচিত না যে, কৈফিয়ত দিতে হবে।

মাননীয় মেয়র সাহেব, আপনার কাছে একটা অনুরোধ। আমাকে দিনের বেলায় ভোট দিতে যেতে বলবেন না। কারণ, ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়। দিন দুপুরে চোখের সামনে ভোট ধর্ষণের যে বীভৎস দৃশ্য দেখেছি। তা কোন দিনই ভুলবো না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দিনের বেলায় কখনো ভোট দিবো না। রাতের বেলায় ভোট দিবো। আমার ভোট আমি দিবো, আপনার ভোটও আমি দিবো।

আজ থেকে ঠিক, একবছর আগের কথা। বড় আশা করে ভোট দিতে গ্রামে গিয়েছিলাম। কত স্বপ্ন দশ বছর পর ভোট দিবো। মনের মধ্যে কী যে সুখ সুখ লাগছিল, তা বলে বুঝাতে পারবো না। মনে হচ্ছিলো, এক্স গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। সে এক অন্যরকম ফিলিংস।

আমি ভোট দিতে কেন্দ্রে গেলাম। অবাক হয়ে দেখি, উলঙ্গ ভোট কেন্দ্র। লোকজন ভোট না দিয়ে ফিরে যাচ্ছে। কেউকেউ হায় হুতাশ করছে ভোট দিতে না পেরে। ভোট না দেওয়ার জন্য অনেকেই আমাকে মানা করলো। খামোখা ভোট দিয়ে লাভ নাই। ভিতরে ভোট ধর্ষণের উৎসব চলছে।

আমি ভোট দিতে এসেছি, ভোট দিয়েই যাবো। মনের মধ্যে জিদ চেপে বসলো। কেন্দ্রের ভিতর প্রবেশ করি। দেখি, ওপেনে সবাই উন্নয়নের পাছায় সিল মারছে। আমাকে একটি ব্যালট পেপার দিয়ে বলল, 'এখানে সিল মারেন।'

আমি আড়ালে যেতে চাইলাম। কিন্তু আমাকে বলল, 'নাহ, ভোট এইখানেই দিতে হবে। আমাদের সামনে।'

আরে ব্যাটা, সবকিছু যদি সবাই সামনে করা যেতো। তাহলে তোদের বাপ-মা ঘরের বাতি না নিভিয়ে তোদের জনসম্মূখেই জন্ম দিতো। আর হয়ত এদের বাপ-মা জনসম্মূখেই এদের জন্ম দিছে, তাই হয়ত সবকিছু সবাই সামনে করতে চাই।

আমি সবাই সামনে ভোট দিতে অস্বীকার করলে আমার সাথে জোড়াজুড়ি শুরু করে দেয়। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নিই, এদের সামনেই আমি ভোট দিবো।

ব্যালট পেপারটি টেবিলে রেখে সিল মারতে উদ্যত হয়েছি, ঠিক সেমূহুর্তে জনসম্মুখে জন্মানো ছেলেটি ধাপ করে আমার ব্যালট পেপারটি নিয়ে ঠাশ করে উন্নয়নের পাছায় সিল মেরে দিল। চোখের সামনে ভোটটি ধর্ষিত হয়ে গেলো। আমি চেয়ে থেকে সিনেমার ভিলেনের মত ধর্ষকের চোখমুখে তৃপ্ত হাসি দেখি। সে বীভৎস কুৎসিত হাসি এখনো দেখতে পায়।।
  

Comments

জনপ্রিয় ব্লগসমূহ

ইবলিশ শয়তান

প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা

একটি চশমা ও কলমের গল্প

আলাদিনের দৈত্য

কাঙ্গালি ভোজ

মুরগী কবির

জন্মদিনের সারপ্রাইজ

এ তালা ভাঙবো কেমন করে

কাছে আসার গল্প

ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ