একদিন রবীন্দ্রনাথের সাথে
হঠাৎ একদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার বাসা এসে হাজির। চোখ বড় করে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
-গুরু আপনি!
আমার কথার উত্তর না দিয়ে ঝটপট করে বলে উঠে,
-তোর কাছে ব্লুহোয়েল গেম আছে?
-ব্লুহোয়েল গেম!!
-থাকলে দে, খেলে আত্মহত্যা করবো
-গুরু, আপনি তো অমর...
-ওরে, সেইজন্যি তো খেলে মরতি চাইছি
এবার অবাকের মাত্রা ছাড়িয়ে হতবাক হয়ে গেলাম। তারপর বললাম,
-কেন মরবেন!! কি হয়েছে
-অপমানে মরি যাতি ইচ্ছে করছে
-অপমান! কে করলো?
-তোরা, করেছিস
-আমরা! মানে?
-হ্যাঁ, মান ইজ্জত আর রাখলি না
-কিভাবে?
-কিভাবে?
-খুব তো ফাল-পারলি নোবেল পাবি বলে। যখন পেলি না তখন বললি, যে নোবেল রক্তখেকো সুচি আর সুদখোর ইউনুছ পাইছে সে নোবেল দরকার নাই।
-হ্যাঁ, ঠিকই ত
-আরে বেকুব, গোল্ডফিশের দল ভুলে গেছিস। একদা এই ভানু সিং একখান নোবেল পেয়েছিল।
-আরে বেকুব, গোল্ডফিশের দল ভুলে গেছিস। একদা এই ভানু সিং একখান নোবেল পেয়েছিল।
-হ্যাঁ, সেটা জানি। তো আমাকে ঝাড়ছেন কেন?
-তোকে ঝাড়াবো নাতো ঝাড়বো কাকে?
-কেন? বঙ্গদেশে আর কেউ নাই?
-ওরে, তুই কাজী দা'র ভাউ ধরেছিস। ফেসবুক, ব্লগে লিখে জাতিকে জাগ্রত করার চেষ্টা করিস। তাই তোকে ঝেড়ে মনটা একটু হাল্কা করছি, এই আরকি...
-কি বলছেন! গুরু?
-ঠিকই বলছি, চালিয়ে যাহ
-গুরু, টুকটাক লেখার চেষ্টা করি মাত্র
-আমি রীতিমত 'নজরুল কবীর' ব্লগের ফ্যান
-গুরু, আর লজ্জা দিয়েন না
-সত্যি বলছি, লেখার হাত তোর অনেক ভালো
-সবই আপনাদের আশির্বাদে...
-যাহ, পানি গরম কর
-গুরু, চা খাবেন?
-নাহ, গোছল করবো
উত্তেজনায় এতোক্ষণ খেয়াল'ই করেনি, রবীন্দ্রনাথের সারা গায়ে ময়লা আবর্জনায় ভরা। গুরুর গা দিয়ে ভুকভুক করে দুর্গন্ধ আসছে। দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
-গুরু, এই অবস্থা কিভাবে হলো?
-আর বলিসনে, সারা দুনিয়া চোঁখের পলকে ঘুরে এসেছি। কিন্তু তোদের এখানে এসে তিন ঘন্টা জ্যামে আটকে ছিলাম। সেকি দূর্বষহ যাতনা। সইতে আর পারিনা।
-কি করলেন তখন?
-বিরক্ত হয়ে বাস থেকে নেমে হাঁটা দিলাম।
-বলেন কী! ঢাকার শহরে হাঁটার মত দুঃসাহস কিভাবে দেখাইলেন?
-ওরে, আমি কি জানতাম। এই শহর আর সেই আগের শহর নেই
-তারপর কি হলো?
-কি আর হবে, হঠাৎ এক বাস কন্ট্রাক্টরে আওয়াজ শুনে চমকে উঠলাম।
-কেন?
-কোন দেশে এলাম, এই ভেবে
-কি শুনেছিলেন?
-'ওস্তাদ ডানে লন, বামে সিংগাপুর'
-তারপর?
-যা হবার তাই হল, সিংগাপুরের সব ময়লা কাঁদাপানি আমার গায়ে এসে পড়লো।
-গুরু, এইটা চেতনার কাঁদাজল। উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে আমাদের গায়ে এসে লাগে। এতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
-হুম্ম, বুঝছি...
-গুরু, এইটা চেতনার কাঁদাজল। উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে আমাদের গায়ে এসে লাগে। এতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
-হুম্ম, বুঝছি...
গোছল শেষে বাথরুম থেকে গুরু হাঁক ছেড়ে বলল,
-একটা আলখাল্লা দে
-গুরু, আলখাল্লা নাই, প্যান্ট শার্ট আছে দিবো?
-প্যান্ট শার্টে কখনো আমারে দেখেছিস?
-দেখি নাই। গুরু পাঞ্জাবি দিই
-পাঞ্জাবি আমি পড়ি না
-তাহলে কি দিবো?
-বোরকা টোরকা থাকলে দে
-গিন্নির বোরকা আছে
-ওটাই দে, আলখাল্লার মত করে পড়ি
গুরু বোরকা পড়তে পড়তে বলল,
-তোরা খুব কনফিউজড জাতি রে
-কিভাবে বুঝলেন?
-এইত সেদিন কাজী'দা এসে ঘুরে গেছে। তোরা তারে একটা সালাম পর্যন্ত দিসনি। অথচ যিনি তোদের জন্য অজস্র ইসলামী গান, হাম- নাত লিখেছেন।
-গুরু, খুবই দুঃখজনক ঘটনা
-আর আমারে দ্যাখ, বাক্ষ্মণ হয়ে আমি আজ সতেরটা সালাম পেয়েছি। কেউ কেউ তো এসে সামনে পানির বোটল ধরিছে
-গুরু, খেতে?
-আরে নাহ! ফুঁ নিতে...
'সতের কোটি বঙ্গের হে মুদ্ধ জননী
রেখছো *বাল করে মানুষ করোনি'
গুরুর চরণ দুটি রিমিক্স করে শুনিয়ে দিলাম। গুরু মনোযোগ সহকারে চরণ দুটি শুনে বলল,
-তোরা শুধু রিমিক্সই করে যাবি। মৌলিক কিছু করতে পারবি নে
-পারবো কেমন করে? আমাদের ভুড়ি ভুড়ি জিআই পাইপ থুক্কু জিপিএ ফাইভ আছে কিন্তু ভিতরে শিক্ষা নাই। পাইপের মতই ভিতরটা ফাঁপা...
-সেটা বুঝেছি, তোদের শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষা দেখে
-কি দেখেছেন?
-শিক্ষামন্ত্রীর 'শুভ উদ্বোধোন' বানানটি। ভাগ্যিস, আমার নামটা লেখেনি।
-লিখলে কি হতো?
-'রবিনধোনাথ' হয়ে যেতাম
আমি ফিক করে হেসে বললাম,
-নোবেলটা কিন্তু তাকেই দেওয়া উচিত ছিল। শিক্ষাব্যবস্থার অভূতপূর্ব থুক্কু অদ্ভুত উন্নতির মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।
একথা বলার পর খেয়াল করে দেখি, গুরু বিষর্ণচিত্তে কি যেন ভাবছেন। উনার মুড অফ দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
-নোবেলটা কিন্তু তাকেই দেওয়া উচিত ছিল। শিক্ষাব্যবস্থার অভূতপূর্ব থুক্কু অদ্ভুত উন্নতির মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।
একথা বলার পর খেয়াল করে দেখি, গুরু বিষর্ণচিত্তে কি যেন ভাবছেন। উনার মুড অফ দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
-গুরু, সামথিং রং?
গুরু এবার একটা দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল,
-সম্পর্কে আমি তোর শশুরকূলের আত্মীয় লাগি। আমার একটা উপকার করবি?
একথা শুনে অবাক হয়ে বললাম,
-শশুড়কুলের আত্মীয়! কিভাবে?
-ঐযে, শিলাইদহের একুলে আমার কুটিবাড়ী আর ঐকুলে তোর শশুড়বাড়ী। মাঝখানে নদী বয়ে বয়ে যায়। এজন্যি বলেছি...
-ও আচ্ছা!
-আমারে তুই বর্ডারটা পার করে দিতে পারবি? কোনমতে দেশটা ছাড়তে পারলে বাঁচি। নোবেলের মান বাঁচাতে এসে, এখন নিজেরই মান-ইজ্জত থাকছেনা।
-গুরু, কি হয়েছে?
-আর বলিস নে, সেটা বলতি পারবো না
-গুরু, না বললে উপকার করবো ক্যামনে?
-শোন, হেঁটে আসার সময় বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে গেপ্তার হয়েছিলাম।
-বলেন কী!!
-হ্যা, পুলিশ আমারে নাজেহাল করে ছেড়েছে
-কেন?
-জঙ্গী সন্দেহে। যতই বলি, আমি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর কিছুতেই বিশ্বাস করে না। আবার বলি, আমি হিন্দু-বাক্ষ্মণ। তাও বিশ্বাস করে না। বলে, তোর মুখে লম্বা দাড়ি, গায়ে জুব্বা। নিশ্চয়, তুই জঙ্গী।
-কি সাংঘাতিক কথা!
-মুখে দাড়ি, গায়ে জুব্বা থাকলে জঙ্গি ট্যাগ! এইটা ক্যামন কথা?
-তা কিভাবে মুক্তি পেলেন?
-প্রমাণ দিয়ে
-কি প্রমাণ দিলেন?
-সেটা কেমনে বলি...
-তবুও বলুন শুনি
-শরমে মরি যাবো নে
-শরম?
-হ্যা, বড়ই শরমের কথা। একশটা নোবেল পেলেও এই লজ্জা ঢাকবে না
-গুরু, এসেছেন বঙ্গদেশে। লজ্জা-শরম নিবেন না পিছে। তা হয় কী? বলুন, কিভাবে মুক্তি পেলেন?
Comments
Post a Comment
আপনার মূল্যবান মতামত দিন