ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ
আমার অসুস্থতার স্ট্যাটাস দেখে অনেকেই আমাকে ফোন দিয়েছে, খোঁজখবর নিয়েছে। কেউকেউ সাহায্যের হাত বাড়াতে চেয়েছে কিন্তু আমি বলেছি প্রয়োজন নাই। শুকুর গুজার আল্লাহপাকের আমাকে যথেষ্ট দিয়েছে। অনেকে আবার জানতে চেয়েছিল, আমার করোনা হয়েছে কিনা? আমি উত্তর দিতে পারিনি, যদিও আমি ভিষণ অসুস্থ ছিলাম। এটা করোনা কিনা সন্দিহান, আবার হলেও হতে পারে?
আমাকে ডাক্তার কোভিড-১৯ এডভাইস করেছিল। আইইডিসিআরে গিয়ে টেস্টটি করতে বলেছিল। মনে ধুকধুকি দুর করার জন্য আমিও আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু টেস্ট করতে পারিনি। বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেছি, লাভ হয়নি। বাসায় এসে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ হয়ে গেছে, আইইডিসিআরেও নমুনা সংগ্রহ বন্ধ, শিশু হাসপাতাল নমুনা সংগ্রহ করেনা, এসএসএইচ শুধুমাত্র সরকারি ডাক্তার-নার্সদের জন্য। পিজি আর ঢাকা মেডিকেলে হচ্ছে, সেখানে টেস্ট করতে হলে সেহেরি খেয়ে লাইন ধরতে হবে তবেই সম্ভব। প্রাইভেট হাসপাতালে এখনো অনুমোদন দেয়নি তাই আর করা হয়নি।
কর্মক্ষেত্রে খুব কাছের একজন মানুষের করোনায় মৃত্যুতে আমি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। বোধকরি, এটাই আমার অসুস্থতার অন্যতম কারণ। আমার জ্বর-সর্দি ছিলনা, শুধু খুসখুসে কাশি ছিল, বুকে চাপচাপ অনুভূতি হচ্ছিল। কখনো কখনো শ্বাসকষ্ট অনুভব করেছি। এটা যদিও করোনার অন্যতম লক্ষণ বলে জানি। তবে এছাড়া আর কোন লক্ষণ ছিলনা।
আমি অফিসে যথেষ্ট সর্তকতার সহিত কাজ করতাম। অফিসে ঢোকার সময় একধরণের চেকাপ হতো। এছাড়াও ল্যাবে আমার রুমে ঢোকার আগে সবসময় ক্লিনারকে দিয়ে জীবাণুনাশ স্প্রে করে আমার ডেস্ক, চেয়ার, কম্পিউটার ক্লিন করে তারপর প্রবেশ করতাম। হ্যান্ড স্যানিটাইজা দশ মিনিট পরপর হাতে মাখতাম। অফিসের মসজিদে জামাতের সহিত নামাজ আদায় হলেও আমি একাকী নামাজ আদায় করতাম। বাসায় এসে রুমে ঢোকার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজা দিয়ে হাত ক্লিন করতাম। তারপর সরাসরি বাথরুমে গিয়ে কাপড় সব ভিজিয়ে গোছল করে বের হতাম। এরপর আমার মোবাইল, চশমা, কলম, চাবিসহ যাবতীয় এলকোহল প্যাড দিয়ে মুছতাম। অফিস থেকে হেঁটে বাসায় এসে ছয়তলা সিঁড়ি বেয়ে যখন রুমের সামনে এসে দাঁড়াতাম। তখন শরীর থেকে ঘাম দরদর করে ঝরতো। এই ঘামাক্ত শরীর না শুকিয়ে গোসল করার কারণে প্রচন্ডরকম ঠান্ডা লেগে যায়। এই ঠান্ডা নিয়ে অফিসে গেলে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
আমার মনের মধ্যে প্রচন্ডরকম ভয়ও কাজ করে। নিজের অজান্তেই হুহু করে কেঁদে উঠেছি। মানুষ কেন এতো সামান্য আঘাতে, কষ্টে, না পাওয়ার বেদনায় আত্মহত্যা করে? আমি জানিনা, তবে এটুকু জেনেছি। কিভাবে মানুষ মৃত্যুর হাত থেকে পলায়ন করতে চায়। শুনেছি, এমন মৃত্যু নাকি শহীদের মৃত্যু, তবুও এমন মৃত্যু কেউ চায় না, আমিও চাইনি। হ্যাঁ আমি বাঁচতে চেয়েছি, সত্যিই তীব আকাঙ্খা নিয়ে বাঁচতে চেয়েছি। যে যা করতে বলেছে, তাই-ই করেছি। যা যা খাইতে বলেছে, তা-ই খেয়েছি। সেইভাবে মেনে চলেছি, সাথে ডাক্তারের ওষুধ তো ছিলই।
আমি কিছু মানুষগুলোর কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। বিপদে স্বান্তনার বাণীও অনেক বড় হাতিয়ার। তাদের আশ্বাস ও দৃঢ় বিশ্বাসে আমার প্রতিটি মূহুর্তের ভারী নিঃশ্বাস আস্তে আস্তে হালকা হয়ে আসে। অসহনীয় কষ্টের ভার অনেকটাই সহনীয় যায়। ধীরেধীরে মলিন মুখটিতে বেঁচে থাকার স্বপ্ন সুখের ঝিলিক ফুটতে থাকে। আমি এক নতুন জীবনে অবগাহন করি।
মানুষ হিসেবে আমি ভালো তা বলছি না। আমি কিছু মানুষের কাছে খারাপ, কিছু মানুষের কাছে ভালো আর কিছু মানুষের কাছে কোনোটাই না। কিন্তু আমি সবার কাছ থেকে এতো দোয়া আর ভালোবাসা পেয়েছি যে, সত্যিই আমি আবেগে আপ্লূত। মহান আল্লাহপাকের অশেষ রহমত আর সবার দোয়া ও ভালোবাসায় এখন সুস্থ, আলহামদুলিল্লাহ। সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও কিছুটা আক্ষেপ নিয়ে পরবর্তী পোস্ট লিখবো, ইনশাআল্লাহ। সবাই ভালো থাকবেন আর সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন।
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
Comments
Post a Comment
আপনার মূল্যবান মতামত দিন