সীমিত আকারে ঘুরাঘুরি

সীমিত আকারে ঘুরাঘুরি

ঈদের এই ক'দিন বাসায় শুয়ে-বসে খেয়ে ভুড়ি দুএক ইঞ্চি বেড়ে গেছে। বউরে কইলাম, 'বাহিরে হেঁটে ভুড়ি কিছুটা কমিয়ে আসি।' বউয়ের সাফ কথা, 'ভুড়ি বাড়ুক সমস্যা নাই, তবু বাহিরে যেতে পারবেনা।'

অবশেষে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে গলির ভিতর'ই হাঁটার শর্তসাপেক্ষে বের হলাম। কিন্তু আমি বের হয়েই একদিকে হাঁটা দিলাম, যে রাস্তাটি সংসদ ভবনের দিকে গেছে। রাস্তায় হাঁটছি দেখে কম পক্ষে ছত্রিশ জন রিক্সা-সিএনজি ওয়ালারা বলছে, 'মামা যাবেন, মামা কই যাবেন?' কেউকেউ তো গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য জোড়াজুড়িও করেছে। কেউ বলেছে, 'মামা ভাড়া লাগবো না, এমনই চলেন।' 

আহা এতো সমাদর, সত্যিই অবাক হওয়ার মতো! অথচ অফিসে যাওয়ার সময় এই রিক্সাগুলো কই থাকে জানিনা? তখন কত তেল জল এদেরকে ঢালতে হয়। তারপরও উত্তর দিবো, 'নাহ যামুনা৷' যদি বলি, 'চলেন না ভাই, ভাড়া বাড়িয়ে দিবো।' উত্তরে বলবে, 'এত কতা ক'ন ক্যা? বলছিনা, যামুনা।'

যাইহোক, রিক্সা-সিএনজিওয়ালা যেন বুঝে আমি শরীর ঠিক রাখতে হাঁটছি। সেইভাবে জগিং করে হাঁটতে শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে চীন-মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে আসলাম। দুঃখিত, চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের নাম কবেই চেঞ্জ হয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নামকরণ হয়েছে। এরপর জিয়া উদ্যান পার হলাম। ভুল বলেছি, এটাও চেঞ্জ হয়ে চন্দিমা উদ্যান হয়েছে। তো চন্দিমা উদ্যান পার হয়ে সংসদ ভবনের সামনে গেলাম। এই ভবনের নামটা অবশ্য চেঞ্জ হয়নি। তবে লোকমুখে শোনা যায়, এটি 'আলী বাবার তিনশো পঞ্চাশ চোরের আসন।' 

এই আসন মানে সংসদ ভবনে সামনে বসে একটু জিরাইলাম। তারপর মোবাইলটা বের করে খানিকক্ষণ ফেসবুকিং করি। হঠাৎ চোখ আটকে গেলো একটা নিউজ দেখে। নতুন অমেরুদণ্ডী প্রাণীর সন্ধান পেলেন নোয়াখালীর ড. বেলাল। তিনি সেই অমেরুদণ্ডী প্রাণীর নাম দিয়েছে 'গ্লাইসেরা শেখ মুজিবী'। যাক, এবার নোয়াখালীর বিভাগ ঠেকায় কে? 

এই অমেরুদন্ডী প্রাণীর নাম, 'গ্লাইসেরা অনুজীবী অথবা পরজীবী হতে পারতো।' কিন্তু তা না 'গ্লাইসেরা শেখমুজিবী'। এটা নিশ্চিত সীমিত আকারে তেল মর্দন করা হয়েছে। তবে এটা আমার কাছে পুরোপুরি চেতনার বরখেলাপ মনে হয়েছে। একজন মহান ব্যক্তির নামে একটা অমেরুদন্ডী প্রাণীর নামকরণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জুকারবার্গের কাছে জানিয়ে ফেসবুক থেকে বিদায় নিলাম।

তারপর বাসার দিকে হাঁটা দিলাম। অনেক হেঁটে ক্লান্ত হয়ে গেছি। ভাবলাম, এখন রিক্সায় চড়ে বাসায় যায়। ওমা! কোন রিক্সা রাস্তায় দেখিনা।  একটা রিক্সা পেলাম কিন্তু যাবেনা। আরেকটা রিক্সাওয়ালাকে বললাম, 'ভাই শ্যাওড়াপাড়া যাবেন।' বলল, 'ওদিকে যামুনা।'

তাই আর কোন রিক্সাওয়ালাকে জিগাইলাম না। হেঁটে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের কাছে আসতেই এক খালি রিক্সাওয়ালা আমারে জিগ্যেস করে, 'মামা, মিরপুর-১০ কোন দিকে?' আমি একলাফে রিক্সায় চড়ে বসে বললাম, 'চলেন, চিনায়ে দিচ্ছি।'

মিরপুর শ্যাওড়াপাড়ায় এসে ভাড়া দিয়ে নেমে  রিক্সাওয়ালাকে বললাম নাক বরাবর যাবেন। সামনে মিরপুর-১০ এর গোলচত্ত্বর। বাসায় আসতেই বউ বলল, 'কোথায় গিয়েছিলে?'

এতসব কথা কি আর বলা যায়? তাই আস্তে করে বললাম, 'সীমিত আকারে হাঁটাহাঁটি করতে...'

Comments

জনপ্রিয় ব্লগসমূহ

ইবলিশ শয়তান

কাঙ্গালি ভোজ

একটি চশমা ও কলমের গল্প

আলাদিনের দৈত্য

মুরগী কবির

জন্মদিনের সারপ্রাইজ

প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা

কাছে আসার গল্প

ডিজিটাল বিড়ম্বনা

নুরা পাগলা গবেষণা ইনিস্টিউট