কিট ও কীটপতঙ্গ
![]() |
কিট ও কীটপতঙ্গ |
ঝড়ে বিধস্ত জঙ্গল। গাছ উপড়ে পড়ে আছে। এক লোক চিৎকার করে কাৎরাচ্ছে গাছে নীচে চাপা পড়ে। তাকে বাঁচানোর জন্য আশপাশ থেকে লোকজন ছুটে আসে। দা, কুড়াল, খুন্তী দিয়ে গাছে কোপ দিতে যাবে; এমন সময় কেউ একজন বলে উঠল, 'এ-ই গাছ কাটা যাবেনা। এটা বনবিভাগের গাছ। তাদের অনুমিত ছাড়া গাছ কাটা ঠিক হবেনা।'
সমাজের লোকজন একযোগে বলে উঠল, 'তা ঠিকই বটে। আগে অনুমতি নিতে হবে।' দা, কুড়াল, খুন্তী ফেলে সবাই মিটিংয়ে বসে। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, লিখিত দরখাস্ত করতে হবে। এদিকে লোকটি গাছের নীচে মরণ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আর বলছে, 'ভাই, আগে আমাকে বাঁচান।' সমাজের লোকজন তাকে ধমক দিয়ে বলল, 'ঐ মিয়া, আমরা কি বসে আছি? তোমাকে বাঁচানোর জন্যই তো কাজ করছি।'
সমাজের লোকজন বন বিভাগের অফিসে দরখাস্ত জমা দিলো। বন বিভাগ তদন্ত কমিটি করলো। সে কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করতে আসলো। তখনও লোকটি মরণ যন্ত্রণায় ছটফট করছে আর চিৎকার করছে। বন বিভাগের লোকজন তার চিৎকার শুনে রেগে বলল, 'ঐ মিয়া চিল্লাইবা না, দেখছো না আমরা কাজ করছি। তোমাকে উদ্ধারের অফিসিয়াল প্রসেস চালাচ্ছি।'
বন বিভাগ তদন্ত করে রিপোর্ট নিয়ে অফিসে গেলেন। বড় কর্তার সামনে ফাইলটি রাখলেন। তিনি ফাইল ঘেটে ডিসিশন দিলেন, 'এটা তো আমার কাজ নয়। যেহেতু ঝড়ে গাছ পড়েছে, এখন এটা অপসারন ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রনালয়ের কাজ।'
ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের ফাইলটি পাঠানো হল। ফাইলটি হাতে পেয়ে তারাও সরেজমিনে আবারও তদন্ত করলো। তদন্তের রিপোর্ট দেখে কর্তা বললেন, 'এই গাছ কাটা যাবেনা। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এদেশ সফরে এসে সম্প্রীতি স্মারক হিসেবে এ গাছটি লাগিয়েছিল। তাদের অনুমতি ছাড়া এ গাছ কাটলে আন্তর্জাতিক আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক বিপন্ন হতে পারে?'
ফাইলটি এবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হলো। সেখান থেকে ব্রিটিশ এম্বাসি হয়ে ফাইল গেলো বৃটিশ মন্ত্রণালয়ে। তিনমাস পরে গাছ কাটার অনুমোদনসহ ফাইল আসে। তখন গাছ কাটতে ঘটনাস্থলে গেলো, তত দিনে ঐ গাছের নীচে লোকটির হাঁড় ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি।
অফ টপিক: এই গল্পটির সাথে গণস্বাস্থ্যের কিট হস্তান্তর বিষয়ক সাদৃশ্য আছে। গণস্বাস্থ্যের পক্ষ থেকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে করোনা সনাক্তের কিট নিয়ে গেলেও কেউ সেটি গ্রহণ করেনি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ বলেছেন, সরকার দুষ্ট। তাই তার কিট নিচ্ছেন না। আর সরকার বলছে, কেন্দ্রে বানানো কিট বৈজ্ঞানিক প্রোটোকল মানেনি।
ক্রিটিকাল মোমেন্ট বা বিশেষ ইমার্জেন্সির ক্ষেত্রের বিশেষ বিবেচনা বলে একটা কথা আছে। বিশ্বব্যাপী মহামারীতে গোটা দুনিয়া যখন অসংখ্য প্রোটোকল শিথিল করেছে। কীট, ভ্যাক্সিন, ড্রাগ গবেষণায় যাবতীয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা একদম ঝেটিয়ে বিদায় করেছে। প্রোটোকলের হাইকোর্ট দেখানো তো দূরের কথা, পাগলের মতো উল্টো তাগাদা দিচ্ছে, কুইক-কুইক! আর আমরা পড়ে আছি প্রোটোকলের লম্বা লিস্ট নিয়ে।
ডা. জাফরুল্লাহ স্যার, আপনার কিট করোনা সনাক্ত করবে কিনা জানিনা, তবে রাষ্ট্র তথা সমাজের কীটদের ঠিকই সনাক্ত করে ফেলেছে।।
Comments
Post a Comment
আপনার মূল্যবান মতামত দিন