মধ্যবিত্তের কথা বলছি...

মধ্যবিত্তের কথা বলছি  

এই কিছুদিন আগের কথা। আমার বাচ্চার সুস্থতার জন্য ওর আম্মু মানত করেছিল। একটা মুরগি সাদগা দিবে। আমাকে বলল, 'তুমি একটা মুরগি কিনে কোন গরীব মানুষকে দিয়ে দাও।'

এর আগেও বেশ কয়েকবার মানত করেছে। সেগুলো দ্রুতই পূরণ করেছি। যেগুলোর বেশিরভাগ ছিল মসজিদে টাকা দান। কিন্তু এবার সে মানত করেছে, জানের সাদগা হিসেবে একটা দেশী মুরগি দিবে। 

এখন মুরগি কিনে কাকে দিবো? মনে মনে এমন জনকে খুঁজতে থাকি। পীরের দরবার কিংবা মাজার ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ করিনা। রাস্তার ফকির-মিসকিনকে দিবো ভাবলাম। কিন্তু কর্পোরেট ফকিরের ভিড়ে সত্যিকারের ফকির খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এই বিষয়ে নিয়ে অন্য একদিন আর্টিকেল লিখবো।   

যাইহোক, বউয়ের মানত পূরণে দুদিন দেরি হওয়ায় ঘ্যানঘ্যান শুরু করে দিল। 'তোমাকে একটা মুরগি সাদগা দিতে বলেছি। তুমি দিচ্ছো না কেন?' বললাম, 'দেখ এটা আমাদের গ্রাম না। যদুর বাপ মধু মিয়া গরীব মানুষ। একটা মুরগি কিনে দিয়ে আসলাম। খেয়েদেয়ে দোয়া করলো। এটা হচ্ছে ঢাকার শহর! না জেনে যাকে তাকে দিলে পিছে দেখা যাবে, সে মুরগিটা বিক্রি করে শুকনো (গঞ্জিকা) খেয়ে ঝিম মেরে পড়ে থাকবে।'

অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাদের অফিসের কাউকে দিবো। অফিসে অনেক ক্লিনার কাজ করে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে গরীব একজনকে দিবো। আছর নামাজের পর অফিসের মসজিদের ক্লিনার কাম মোয়াজ্জেমকে বললাম, তোমাদের ক্লিনার সুপারভাইজারকে আমার সাথে দেখা করতে বলবে।'

তাৎক্ষণিক সুপারভাইজার আমার সাথে দেখা করে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার ক্লিনারদের মধ্যে সবচেয়ে নিডি মানে গরীব অবস্থায় কে আছে? সুপারভাইজার উত্তর দিল, 'স্যার, সবাই...।' বললাম, 'সেটা ত বুজছি, কিন্তু আমি একজনকে কিছু সাহায্য করতে চায়। সবাইকে সাহায্য করার মত ধনাঢ্য আল্লাহপাক এখনো করে নাই। তবে আমি চেষ্টা করবো।'

পরেরদিন সুপারভাইজার একজন ক্লিনারকে নিয়ে আমার সাথে দেখা করে। ক্লিনার ভদ্রমহিলার স্বামী অকর্মা, দুই মেয়ে নিয়ে কোনমতে চলে। ছোটো মেয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ে। বড় মেয়ে এবার এসএসসি দিয়েছে। এখন সে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। ভদ্রমহিলার সারাদিন এখানে ডিউটি করে রাতে মেয়ের সাথে হাসপাতালে থাকে।

কথাগুলো শুনে চোখ ছলছল করে উঠলো। আমি উনাকে কিছু টাকা দিলাম। আর বললাম, পারলে একটা মুরগী কিনবেন, বাকি টাকা দিয়ে মেয়ের ওষুধ কিনবেন। আর আপনার বাচ্চাসহ আমার বাচ্চাদের জন্য দোয়া করবেন।

উনার চোখ চিকচিক করে উঠলো জলে। কারোর ছলছল চোখ আমাকে প্রচন্ডরকম হার্ট করে। তাই আমি আর চোখের দিকে তাকাতে পারি নাই। সেদিন অনুধাবণ করলাম, এই আজব ঢাকার শহরে দুইশ্রেণীর মানুষ ভালো আছে। এক. উচ্চবিত্ত দুই. নিন্মবিত্ত। নিন্ম মধ্যবিত্তরা আছে কষ্টে। এরা না পারে অভাবের জ্বালা সইতে, না পারে হাত পেতে সাহায্য চাইতে।

বর্তমানে এদেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দিন দিন বাড়ছে। মৃত্যুর মিছিল ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। সবকিছু এখন স্থবির, মানুষ কর্মহীন। তাই আসুন, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সাহায্যে হাত বাড়ায়। আমাদের সার্মথ্য অনুযায়ী যার যার অবস্থান থেকে সাহায্য ও সহযোগীতা করি। আর হ্যাঁ, ত্রাণ দাতাদের করজোড়ে অনুরোধ করবো। ত্রাণসামগ্রী যেন সেইসব মানুষের দোরগোড়ায় পৌছায়। যারা চক্ষুলজ্জার ভয়ে হাত পেতে সাহায্য চাইতে পারেনা।

Comments

জনপ্রিয় ব্লগসমূহ

ইবলিশ শয়তান

প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা

একটি চশমা ও কলমের গল্প

আলাদিনের দৈত্য

কাঙ্গালি ভোজ

মুরগী কবির

জন্মদিনের সারপ্রাইজ

এ তালা ভাঙবো কেমন করে

কাছে আসার গল্প

ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ