নিজের ছবি আঁকা চিত্রশিল্পী
-বাড়ি থেকে গতপরশু আসলেন। আবার যাবেন?
বললাম,
-হ্যাঁ, স্মার্টকার্ড নিতে যাবো
বন্ধুবর কলিগ ইয়ার্কির সুরে বলল,
-আপনি এমনিতেই স্মার্ট! আবার স্মার্ট কার্ডের দরকার কি?
একথা শুনে হাসলাম। স্মার্টকার্ডের দরকারটা আমি হাড়েহাড়ে টের পেয়েছি। অনেক সময়, বুঝিয়ে দিতে হয়েছে এই জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবিখানা আমার। আবার অনেক সময়, ফটোকপির কার্ডটি আমি নিজেই চিনতে পারি না।
একটা ঘটনা বলি, একদিন ইমার্জেন্সি টাকা পাঠাবো দুলাভাইয়ের উত্তরা ব্যাংক একাউন্টে। টাকা জমা দিতে ব্যাংকে গেলাম। কর্মকর্তা বলল,
-এটা পূরণ করুন
আমি টাকার রশিদে টাকার অংক লিখে বললাম,
-এইযে নিন
-আরে, রশিদসহ আপনার সকল ইনফর্মেশন লাগবে। সেগুলো ফরম পূরণ করুন।
একথা শুনে অবাক হয়ে বললাম,
-নিজ পরিশ্রমের টাকা পাঠাবো। তার জন্য আবার তথ্যও লাগবে!
-জ্বী, এখন থেকে টাকা পাঠাতে হলে তথ্য দিতে হবে।
আজব নিয়ম! তা কি আর করার আছে। বিশাল বড় ফর্দে চৌদ্দগোষ্ঠীর নামধাম ও যাবতীয় তথ্য পূরণ করে টাকাসহ জমা দিলাম। এবার বলল,
-জাতীয় পরিচয়পত্র দিন।
এবার টাস্কি খেয়ে বললাম,
-এতো ইনফর্মেশন দেওয়ার পরও আবার পরিচয় পত্র লাগবো?
-হ্যাঁ, সরকারের নির্দেশ
-পরিচয়পত্র তো আনি নাই
-তাহলে টাকা নিতে পারব না
বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় আছে অবৈধভাবে, অন্যায়ভাবে, জোরজুলুম করে। নিজেরাই অন্যায়ের চোরাবালিতে ডুবে জনগনকে ন্যায় ও নিয়ম শেখায়। সেদিন হয়ত আর বাকি নেই, পথেঘাটে গাড়ির লাইসেন্স চেক করার মত জনগনকেও চেকিং করবে। পুলিশ জনগনকে ঠেক দিয়ে বলবে,
-তোর লাইসেন্স কই?
-স্যার, লাইসেন্স কি?
-আরে, জাতীয় পরিচয়পত্র
-স্যার, পরিচয়পত্র নাই
-তাহলে, থানায় চল
-কেন?
-তুই রোহিঙ্গা
কি আর করবো, টাকা জমা না দিয়ে বাসায় ফিরে এলাম। তারপর জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে ফটোকপির দোকানে গেলাম। পরিচয়পত্র ফটোকপি করার পর সেই ফটোকপিটা দেখে ভ্রু কুচকে দোকানদার আরেকটি ফটোকপি করতে যাবে তখন জিজ্ঞেস করলাম,
-ভাই, সমস্যা কি?
-না মানে, ছবি ক্লিয়ার আসে নাই
-দেন, হইছে। ক্লিয়ার লাগবেনা
-আরেকবার চেষ্টা করে দেখি
-ভাই। আমার ছবি আমি তো নিজেই চিনতে পারিনা। মেশিন চিনবে কিভাবে?
এরপর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিটা হাতে নিয়ে বললাম,
-ভাই, কাঠপেন্সিল আছে?
-আছে
-একটু দিবেন প্লিজ
দোকানদার অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি পেন্সিল দিয়ে পরিচয়পত্রের ফটোকপির ছবিতে হালকা করে চোঁখ, নাক ও মুখে আঁক দিলাম। তারপর ব্যাংকে গেলাম। ব্যাংক কর্মকর্তা বললেন,
-আপনার ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে আর্ট করেছেন?
-জ্বী, আঁকিয়েছি
-আঁকাআঁকি করেন বুঝি?
-মাঝে মাঝে করি
-আপনি কি অঙ্কনশিল্পী?
-নাহ
-তাইলে, আঁকেন কিভাবে?
-ঠেলায় পড়ে
-ঠেলায় পড়ে আর-কি আঁকেন?
-শুধু নিজের ছবি আঁকি।।।
-নাহ
-তাইলে, আঁকেন কিভাবে?
-ঠেলায় পড়ে
-ঠেলায় পড়ে আর-কি আঁকেন?
-শুধু নিজের ছবি আঁকি।।।
Comments
Post a Comment
আপনার মূল্যবান মতামত দিন