আমি নেতা হবো
লেকপার্কে বসে এক জ্যোতিষী হাত দেখছে দেখে ভাবলাম, হাতটা একটু দেখায়৷ দেখি, ভাগ্যে কি আছে। যদিও এসব বিশ্বাস করি না। তবুও আকৌতুহলী হয়ে হাতটা এগিয়ে দিলাম। জ্যোতিষী আমার হাতটা ধরে চোখমুখ খিঁচে বলল,
-: বাহ! তোর হাত তো ফক ফকা
শুনে বললাম,
-: জ্বী, মাত্রই হাত ধুয়ে এসেছি
আমার চোখের দিকে জ্যোতিষী নিখুঁত দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর আমার হাতের রেখায় চোখ রেখে বলল,
-: তোর কপালে রাজতিলক জ্বলজ্বল করছে!
একথা শুনে অবাক হয়ে বললাম,
-: তাই! তা কি দেখা যাচ্ছে?
-: বৎস, এই বছরই তোর চাকরি নিশ্চিত
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে বললাম,
-: জ্বী বাবা, একটা চাকরি নিশ্চিত হয়েছে
আমার কথায় সাড়া পেয়ে জ্যোতিষী এবার কনফিডেন্সের সহিত বলল,
-: তোর হাতের রেখা বলছে, সামনের বছরেই বিয়ে। মেয়ে বহুত সুন্দরী...
আমি উৎসাহী হয়ে বললাম,
-: তাই নাকি! তো যে বউটা এখন আছে ওটার কি হবে?
আমার এমন কথা হয়তো তিনি আশা করেনি। তাই কিঞ্চিৎ রেগে গিয়ে বলল,
-: বেত্তামিজ পোলা, হাত দেখাতে এসেছিস ক্যান?
-: এমনিতেই, মন চাইলো তাই
-: শোন, মনকে সবসময় প্রশ্রয় দিবি না
-: মন যা চাই, আমি সেটাই করি
-: তুই বেশি কথা বলিস
-: জ্বী, উচিৎ কথা একটু বেশিই বলি
-: উচিৎ কথা, সবসময় বলা ঠিক না
-: কেন?
-: বিপদে পড়তে পারিস
-: কথাটি কি হাতের রেখায় আছে?
-: সব কথা হাতের রেখায় থাকেনা। পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে বলা যায়।
-: আপনি কি সব বলতে পারেন?
-: শুধু ভবিষ্যৎটা পারি
-: নিশ্চয়ই, আপনার ভবিষ্যৎটা আপনি জানেন?
জ্যোতিষী বুঝে গেছে, আমি কোন লাইনে কথা বলছি। তাই চারপাশে তাকিয়ে আস্তে করে বলল,
-: শোন, আমার কাছে যারা আসে তারা বেশি ভাগই ভাগ্যাহত মানুষ। এই নিরাশ মানুষদের যখন একটু আশার বাণী শোনায় তখন তাদের মধ্যে শক্তি সঞ্চার হয়। কখনও কখনও সেটা ফলেও যায়।
আমি তার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছি। আমার শুনার আগ্রহ দেখে ব্যাগ থেকে পুরনো পত্রিকা বের করে আমাকে বসতে দিলেন। আমি পত্রিকা বিছিয়ে আয়েশ করে বসলাম। তার সাথে অনেক কথা হলো। যখন উঠতে যাবো তখন জ্যোতিষ বাবা আমাকে বলেন,
-: বাবাজী, আপনার হাতটা কি আরেকবার দেখতে পারি?
ওরেব্বাবা, এতক্ষণ তুই-তুকারী করে কথা বলছিল। এখন তুমি টপকে ডিরেক্ট আপনিতে গিয়ে ঠেকছে। হাত কাচুমাচু করে উনার সামনে ধরলাম। উনি হাতটা ধরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিলেন। তবে দৃষ্টি আমার হাতের উপর নয় আমার পাছার নিচে। বেশ কিছুক্ষণ দেখার পর বলল,
-: আপনি, ভবিষ্যতে বড় নেতা হবেন
আকাশ থেকে পড়ার মত অবস্থা আমার। এমন কথা শুনে আশ্চর্য্য হয়ে বললাম,
-: বলেন কী! নেতা!!
-: হ্যাঁ, আপনার ভাগ্যরেখা তো তাই বলছে
আরে, আমি সেই যার সামনে কলম ধরলে দু-চার লাইন টেনে বের সম্ভব কিন্তু মাউথ স্পীকার ধরলে দুটা কথা বের অসম্ভব। আর সে হবে নেতা। জ্যোতিষ ব্যাটা নিশ্চয়ই আমাকে খুশি করার জন্য ঢোপ মারছে। লোক মুখে শুনেছি, পুলিশের ডান্ডার বাড়ি যার পাছায় যত বেশি, সে ততো বড় নেতা। নেতাদের সিল পাছায় থাকে জানি কিন্তু আমার পাছায় কি দেখে শিউর হয়ে বলল, আমি নেতা হবো!
আরেচ্ছালা, আমি পাছার নিচে তাকিয়ে হতবাক! চোখ বড়বড় করে দেখি, পুরনো একটি পত্রিকায় গ্রুপছবিতে আমার বদনখানি। সেই নিউজের হেডলাইন "আজকের প্রজম্নের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন"। সেই সংগঠনের সাথে আমি যুক্ত আছি। এটা আমার সৌভাগ্য যে, আমি নতুন প্রজম্নের জন্য কিছু করতে পারবো।
কাকতালীয় ভাবে আমি সেই পুরনো পত্রিকার গ্রুপছবিসহ নিউজের উপর বসে আছি। যেটা দেখে এমন মন্তব্য করেছে। আমি জ্যোতিষীকে বিশাল বড় ধন্যবাদ দিয়ে বললাম,
-: আপনি মহান জ্যোতিষী! শুধু হাত দেখে নয়, পাছা দেখে সব বলে দিতে পারেন।।
![]() |
আজকের প্রজন্মের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যবৃন্দ |
Comments
Post a Comment
আপনার মূল্যবান মতামত দিন