Posts

Showing posts from 2019

অদ্ভুত কিসিমের মানুষ

'আজকের প্রজন্ম' এর সেমিনার শেষ করে রাতে বাসায় ফিরছিলাম। পুরানা পল্টন থেকে যে বাসে চড়েছি সে বাসের যাত্রী ছিল হাউজফুল। আমার পাশের জানালার ধারে বসা যাত্রী বাংলা মটরে এসে নামতেই একজন মহিলা যাত্রী বাসে উঠলেন। আমি উনাকে দেখে আমার সিট ছেড়ে দিয়ে পাশের জানালার ধারের সিটে বসতে যাবো, এমন সময় পিছনে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা এক মুরব্বী চাচা বলল, 'বাবা আমি অন্ধ মানুষ। আমাকে বসতে দিবে?'   একথা শুনে আমি সাথেসাথেই উঠে দাঁড়িয়ে উনাকে বসতে দিলাম। যদি আমি আগেই উনাকে খেয়াল করতাম, তাহলে আগেই বসতে দিতাম। যাইহোক, উনাকে জানালার ধারের খালি সিটে বসিয়ে, আমার সিটে ওই ভদ্রমহিলাকে বসতে বললাম। ঠিক সেই সময়ে হুট করে এক অদ্ভূত কিসিমে’র লোক এসে আমার সেই সিটে বসে পড়লো। তার দুহাত জুড়ে গাঁদাফুলের মালা প্যাঁচানো, চুলে কাটিং গলাছিঁলা মুরগীর মত, পরনে লুঙ্গি ও গায়ে গোল গলার গেঞ্জি। সেই গেঞ্জির সামনে আবার সানগ্লাস ঝুলিয়ে রেখেছে। চাহনিটাও অদ্ভূত ক্যাবলাকান্ত টাইপের মত ফ্যালফ্যালে...!  আমি তাকে বললাম, 'এইযে ভাই উঠেন। এই ভদ্রমহিলাকে বসতে দিন।' সে কোন কথা না বলে চুপ করে বসে থাকে। আমি তাকে আবারও বললাম, '...

মুরগী কবির

সাত সকাল বেলা ছাদে হাঁটাহাঁটি করছি। হঠাৎ চোঁখ পড়লো পাশের ছাদে। মেহেদি রংয়ে সাদা-পাকা গোঁফওয়ালা এক ভদ্রলোক বিষন্নচিত্তে ছাদে পায়চারী করছেন। ভদ্রলোক লোকটিকে কেমন চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেন দেখেছি? ওহ! মনে পড়েছে উনি সেই লোক! যিনি একজন নাস্তিক, চেতনা ব্যবসায়ী ও মুরগীযোদ্ধা। যার নাম শাহরিয়ার কবির । তবে উনি 'মুরগী কবির' হিসেবে খ্যাত। কৌতুহলী হয়ে তার সামনে এগিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, -কেমন আছেন? গম্ভীর গলায় 'ভালা আছি' বলে আমাকে জিগ্যেস বলেন, -তুমি কেডা? আমি ' নজরুল কবীর ' বলতেই আমার দিকে আড়চোঁখে তাকিয়ে বলেন, -ফাজলামী করো -ফাজলামী! কোথায় করলাম? -এইযে নামের শেষে 'কবির' লাগাইছো -ওমা! নামের শেষে কারো কবির নামটা থাকতে পারেনা? -পারে, তবে এই নামের শব্দটা তোমরা বিকৃতভাষ্য করে ফেলেছো। যার তার নামের পাছায় লাগিয়ে দাও। -যেমন -এইযে, মুরগীর পাছায় লাগিয়ে বলো 'মুরগী কবির'।          আমি ফিক করে হেসে ফেললাম। আমার হাসির শব্দ শুনে মনে হয়, উনার কাশি শুরু হয়ে গেলো। উনি কাশছেন আর আমি এদিক ওদিক উঁকি দিয়ে মুরগী খুঁজছি। উনি আমার উঁকিঝুকি দেখে কাশি থামি...

মুরগীযোদ্ধা

বিশিষ্ট  মুরগীযোদ্ধা, ঘাতক দালান নির্মুল কমিটির সভাপতি যদিও তিনিই সবচেয়ে বড় দালাল, পাকবাহিনীর মুরগী সাপ্লায়ার ও সেকুলার (নাস্তিক)  শাহরিয়ার কবীর  বলেন, 'অ তে অযু করে পাক হও আযান শুনে নামাজে যাও ইসলাম চাই শান্তি ঈমান বাড়াই শক্তি কোরআন পড় দিনেরাতে খোদার রহমত পাবে তাতে।' বাচ্চারা এসব কি পড়ছে;  এসব পড়ে বাচ্চারা বড় হয়ে হলি আর্টিজেনের মত ঘটনা ঘটায়। তিনি  একটি ইংলিশ মিডিয়ামে বাচ্চাদের বর্ণ শিক্ষা দেওয়া নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব কথাবার্তা বলেন। এই সেকুলাঙ্গার মুরগী কবীরের কক-কক-ককালাপ শুনে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, নতুন প্রজম্মকে ইসলামবিদ্বেষী করে ও ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে নিজের ফায়দা লুটা ছাড়া আর কিছুই না। যেমন ফায়দা লুটে মুক্তিযুদ্ধের সময় তারপর মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী এই সময়।           এই ধর্মবিদ্বেষী বিনা ভোটের সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য তাদের চেতনার মেশিন আবিস্কার। যে চেতনার মেশিনে কোন রাজাকার ঢুকলে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে বের হয়। আর সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা এই চেতনার মেশিন থেকে বের হয়ে গেলে রাজাকার হয়ে যায়।...

যন্ত্রমানবী

বাস থেকে নেমে বাসার দিকে হেঁটে যাচ্ছি। হঠাৎ খেয়াল করলাম, কে যেন আমাকে অনুসরণ করছে। পিছে তাকিয়ে দেখি, সিল্কের কাপড় পরিহিত একটি মেয়ে হেঁটে আসছে। দেখে ভাবলাম, ধুর! সে আমাকে অনুসরণ করবে কেন?  বাসার গলির মুখে এসে কি মনে করে যেন ঘাড় ঘুরিয়ে অবাক হয়ে গেছি! সেই মেয়েটি আমার পিছ ধরে পিছে পিছেই আসছে। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। সেই মেয়েটিও আমার ঠিক দু'ফুট দুরে এসে দাঁড়ালো। জিজ্ঞেস করলাম, -কে তুমি? চোঁখ মুখে সবুজ আভা এনে বলল, -আমি সোফিয়া 'সোফিয়া' নামটি শুনে আমি স্মৃতির পাতায় স্ক্যান দিলাম। নাহ, সোফিয়া নামে কেউ আসলো না। শে*' নামের একজন উঁকি দিল। সাথে সাথে তাকে ডিলিট মেরে দিলাম। কারণ, ওই ভাইরাসটা এক সময় পুরো জীবনটা হ্যাং করে ফেলেছিল। থাক সে প্রসঙ্গ। আমি অনেকক্ষণ ভেবেচিন্তে বললাম, -ঠিক, চিনতে পারছি না? -তুমি মিথ্যে বলছো -সত্যি বলছি, আমি চিনতে পারছি না  -তোমাকে কিন্তু আমি ঠিকই চিনি -কিভাবে? -তুমি ব্লগার ' নজরুল কবীর ' -এটা এমনকি পরিচয়? -তোমার কাছে এটা সাধারণ। তবে কারো কারো কাছে তুমি অসাধারণ -একটু বেশি হয়ে যাচ্ছেনা? -বেশি কোথায়? রবিন্দ্রনাথ কে নিয়ে...

একদিন রবীন্দ্রনাথের সাথে

Image
হঠাৎ একদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার বাসা এসে হাজির। চোখ বড় করে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, -গুরু আপনি! আমার কথার উত্তর না দিয়ে ঝটপট করে বলে উঠে, -তোর কাছে ব্লুহোয়েল গেম আছে? -ব্লুহোয়েল গেম!! -থাকলে দে, খেলে আত্মহত্যা করবো -গুরু, আপনি তো অমর... -ওরে,  সেইজন্যি তো খেলে মরতি চাইছি এবার অবাকের মাত্রা ছাড়িয়ে হতবাক হয়ে গেলাম। তারপর বললাম,    -কেন মরবেন!! কি হয়েছে -অপমানে মরি যাতি ইচ্ছে করছে -অপমান! কে করলো? -তোরা, করেছিস -আমরা! মানে? -হ্যাঁ, মান ইজ্জত আর রাখলি না -কিভাবে? -খুব তো  ফাল-পারলি নোবেল পাবি বলে। যখন পেলি না তখন বললি, যে নোবেল রক্তখেকো সুচি আর সুদখোর ইউনুছ পাইছে সে নোবেল দরকার নাই। -হ্যাঁ, ঠিকই ত -আরে বেকুব, গোল্ডফিশের দল ভুলে গেছিস। একদা এই ভানু সিং একখান নোবেল পেয়েছিল। -হ্যাঁ, সেটা জানি। তো আমাকে ঝাড়ছেন কেন?        -তোকে ঝাড়াবো নাতো ঝাড়বো কাকে? -কেন? বঙ্গদেশে আর কেউ নাই?  -ওরে,  তুই কাজী দা'র ভাউ ধরেছিস। ফেসবুক, ব্লগে লিখে  জাতিকে জাগ্রত করার চেষ্টা করিস। তাই তোকে ঝেড়ে মনটা এক...

বেলতলায় একবারই যাওয়া ভালো

Image
হঠাৎ আমার এক বান্ধবী ফোন দিয়ে বলে, -দোস্ত, তুই কোথায়?  বর্তমানে আমি যে জায়গায় অবস্থান করছি। সেই জায়গার নাম'ই বললাম। -৭ মার্চে আছি... বান্ধবী আমার অবাক হয়ে বলল,   -আরে যাহ! ৭ই মার্চের ভাষণ সেই কবেকার কথা... আমি বললাম,  -আরে শোন, ৭মার্চের ভাষণে না ভবনের কাছাকাছি আছি -কীহ, যা-তা বলিস! -অবাক হলি? -হবোনা, কি বলছিস এসব! ভাষণ না ভবন। -শোন, ৭ মার্চ এখন ভাষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ভবনের মধ্যেও ঢুকে গেছে। মেয়েদের হোস্টেলের নামকরণ হয়েছে।   -বুচ্ছি, তুইই ওখানে কি করি? টাংকি মারছিস? -শোন, আমাদের রাস্ট্রপ্রতি যদি মারতে পারে টাংকি। আমি মারলে দোষ কি? বান্ধবী আমার ৯ নম্বর বিপদসংকেত শুনিয়ে বলল, -দেখিস, ভাবী জানলে কিন্তু খবর আছে... -সেই খবর! আমি আগেই মুখস্থ করে রেখেছি -ধুর, তোর সাথে কথায় পারবনা -থাক, আমার কথা। এখন বল তো কি খবর? কি মনে করে ফোন করেছিস?      এবার বান্ধবী একেবারে চুপসে গেলো। সে নাক সিটকে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল, -তোর কি হাতে সময় আছে? -জ্যামে যেহেতু আটকে বসে আছি। সময় অফুরন্ত... বান্ধবী দুখানা বড়বড়...

জগা খিচুড়িতন্ত্র

Image
 ব্লগার  আদিকাল থেকে মানুষকে ছলে, বলে, কৌশলে শাসন ও শোষণ করতে যে মন্ত্র মানুষ ব্যবহার করত সেটাই শাসনতন্ত্র নামে অভিহিত। যেমন, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি। আমাদের সংবিধানে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ লেখা থাকলেও দেশে গনতন্ত্রের লেশমাত্র নাই। দেশে এখন নতুন এক তন্ত্রের উন্মেষ ঘটেছে। এই তন্ত্রকে নির্ধিদ্বায় "জগা খিচুড়িতন্ত্র" বলা যেতে পারে। এখানে রাজতন্ত্র নেই, আবার আছে। যেমন, উত্তরাধিকার পদ্ধতিতে প্রতিনিধি ও পদ নেতাদের সন্তানেরা'ই পায়। জীবনে কোনদিন রাজপথে নামেনি, কোন মিছিলে মিটিংএ শ্লোগান দেয়নি, এমন কেউ শুধুমাত্র বাপকা বেটা অথবা মা কা লাড়কা/লাড়কি হিসেবে বিশাল পদ অলঙ্কৃত করে থাকে। দিব্বি নেতা বনে চলে যায়।   এখানে স্বৈরতন্ত্র নেই, আবার আছে। যেমন, চলমান শাসনব্যবস্থা জনগনের ভাষায় দানবীয় আকার ধারণ করেছে। কোন কথা বলা যাবেনা, কোন প্রতিবাদ করা যাবেনা। জনগনের ভোটাধিকার খর্ব করে অদ্ভুত গনতন্ত্রের আড়ালে যে স্বৈরচারিতা চলছে, সেটা এরশাদের স্বৈরশাসন আমলকেও ছাড়িয়ে গেছে। এখানে ভোট হয়, ভোটার ছাড়া রাতের আঁঁধারে। এখানে সাংসদ...

একটি চশমা ও কলমের গল্প

Image
২০০১ সাল। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। ভাল ছাত্র না হলেও নিয়মিত ক্লাস করার দরুণ ভাল ছাত্র হিসেবে পরিচিতি হই। আমি বরাবর মিশুক প্রকৃতির, তাই খুব সহজেই সবার সঙ্গে দ্রুত বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ক্লাস না থাকলে আমি তাদের সঙ্গে আড্ডা দেয়, মজা ও মাস্তি করি।  সদ্য যৌবনে পা দেওয়ায় চোখে রঙিন চশমা। যা দেখি তাই ভালো লাগলেও আমি একটু ব্যতিক্রম ছিলাম। প্রেম-ভালবাসার অফার সরাসরি অথবা আকার ইঙ্গিতে পাচ্ছি প্রায়শই। সেগুলো কৌশলে ইগনোর করছি। আমি যে ধোঁয়া তুলশীপাতা তা কিন্তু না। তবে এগুলো আমার পছন্দ হতো না। আমার পছন্দ বরাবরের মত'ই ধোঁয়াশা, মিথ্যে মায়া ও মরিচিকার মত। যা শুধু দুর থেকে হাতছানি দেয়, কাছে টানে না।                   যাইহোক, সেই গল্পে আসি। একদিন ক্লাসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি। আড্ডা ও গল্পের ফাঁকে আমার এক বান্ধবী বলে ফেলে, 'কবির, তুমি না খুউব সুন্দর। তোমাকে আমার খুউব ভালো লাগে। আমি তোমাকে ভালবাসি।' শুনে টাস্কি খেয়ে গেলাম। হুট করে এমন কথা শুনবো, ভাবিনি। কিছুটা থ'মেরে বসে রইলাম। তারপর নিরবতা ভেঙে এটাকে গল্পের একটা অ...

একজন ব্লগার

Image
আমি একজন ব্লগার। সেইসাথে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কবি, গীতিকার ও গল্পকার। সর্বপরি একজন মানুষ। আমি লিখনী শক্তি দিয়ে দেশ ও সমাজের অন্যায় ও অনিয়মের প্রতিবাদ করার চেষ্টা করি। লেখনীর মাধ্যমে মানুষের বিবেককে জাগ্রত করার চেষ্টা করি। অনেকের মতে, আমি নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ায়। এই কথাগুলো পড়ে কেউ হয়তো হাসছেন, কেউবা ভাবছেন একটু বেশি হয়ে গেলো। নিজের ঢোল নিজেই পেটাচ্ছে। তাদের বলি, ভাইরে নিজের ঢোল নিজের'ই পেটানো ভালো। অন্যকেউ পেটালে ফেটে যাওয়ার আশংকা থাকে। হা হা হা...              সত্য কথা হচ্ছে, আমি লিখতে ভালবাসি। স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। মানুষকে ভালো বাসতে ভালবাসি। অন্যের উপকারে নিজেকে সর্বদা প্রস্তুত রাখতে ভালবাসি। চেষ্টা করি, কারোর বিপদে সাধ্যমতো পাশে দাঁড়াতে। মানুষ হিসেবে দোষ গুণ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আমার দোষ বা ভুল কেউ ধরিয়ে দিলে, তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকি। তাই নিন্দুকেরেও আমি ভালবাসি। সমাজের অন্যায়, অনিয়ম ও অবিচার আমাকে খুবই ভাবায়। যেটা আমি কিছুতেই মানতে পারিনা। আমাকে মারাত্মকভাবে প্রতিবাদী করে তোলে। অনেক হুমকি-ধামকি আসে, অনেকে লিখতে মানা করে। তবুও আমি আ...

জন্মদিনের সারপ্রাইজ

Image
অনেকদিন ধরে অফিসের এক কলিগ একটা জীবন বীমা করানোর জন্য পিছে লেগেছিল। তখন আমি সায় দেয়নি। কারণ, আমার সঞ্চয় করার মত অবস্থা ছিলনা। যে টাকা মাসে বেতন পেতাম। তা দিয়ে বাসা ভাড়া, থাকা-খাওয়া ও বাড়িতে পাঠিয়ে উদ্বৃত্ত তেমন থাকতো না। কোনমতে সচ্ছলতায় দিন পার চলছি, সেইসাথে জীবন যুদ্ধে নিজেকে একটু একটু করে তৈরি করছিলাম।        হুট করে আব্বা-মা আমার বিয়ের জন্য মেয়ে পছন্দ করে। ঠিক সেই সময়ে, এতটাই ব্যস্ত হয়ে গেলাম। একটু স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিবো, সে উপায়ও নাই। হাতে তখন দু-তিনটা চাকরির অফার চলে আসে। যার একটিতে জয়েন্ট করেছি, আরেকটিতে ট্রেনিং করছি আর বর্তমানটায় ডিউটি করছি। রাতে বাসায় ফিরে একটু চোখ বুজবো, সেটাও পারছিনা। দীপ্ত টিভির রাইটিং ওয়ার্কশপের এসাইনমেন্ট তৈরি করতে হচ্ছে।  এরমধ্যেই সেই মেয়ের ছবি আমাকে দেখানোর জন্য ইমেইল করে। ব্যস্ততায় সেই ছবি দেখার কথা বেমালুম ভুলে গেলাম। আমাদের আত্মীয় হয়, সেই সুবাদে অনেকদিন আগে তাকে একবার যদিও দেখেছিলাম কিন্তু সেটা মনে নাই। বাড়ি থেকে চাপাচাপি করায়, ছবি দেখতে বাসায় গেলাম। বাসায় ল্যাপটপে মডেম দিয়ে নেট চালায়। বাসায় গেছি কিন্তু রুমে ঢুকতে ...

প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা

Image
গিন্নী বাচ্চাদের জন্য কেক বানাচ্ছে। চুলার অল্প আঁচে পেসার কুকারের মধ্যে বাটি বসিয়ে। আমি কেক হয়েছে কিনা দেখতে কিচেনে গেছি। দেখি, চুলা বন্ধ হয়ে আছে। গিন্নীকে ডেকে বললাম, 'তুমি কেমন আস্তে দিছো যে চুলা বন্ধ হয়ে গেছে।' তাৎক্ষণিক গিন্নী গ্যাসের চুলা অন করে। কিন্তু হায়, গ্যাস নাই। ঘটনা কী, ১হাজার টাকার গ্যাস রিচার্জের ১মাসও হয়নি, গ্যাস গেলো কই? প্রিপেইড গ্যাস মিটারে তাকিয়ে দেখি, 'EE' সংকেত দিচ্ছে, সেইসাথে লালবাতি জ্বলছে আর নিভছে। জীবনে সংকেত বলতে একটি সংকেত'ই চিনি, সেটা হলো হানিফ সংকেত। এইটা কিসের সংকেত জানতে তাড়াহুড়া করে প্রিপেইড গ্যাস মিটার ব্যবহার নির্দেশিকা দেখলাম। সিসমিক সেন্সরে জোরালো ভূমিকম্প অনুভূতি হলে কিংবা মিটারে জোরে ধাক্কা লাগলে 'EE' সংকেত দিয়ে লাল বাতি জ্বলবে এবং মিটার বন্ধ হয়ে যাবে। তারমানে, ভূমিকম্প হয়েছে! কখন হলো? কিচ্ছুই তো টের পেলাম না। তাহলে হয়ত আগাম ভূমিকম্পের খবর পেয়ে মিটার আগেভাগেই বন্ধ হয়ে বসে আছে। ডিজিটাল মিটার বলে কথা! সে যাইহোক, এখন করণীয় কি? আমি নির্দেশনা অনুযায়ী মিটারের 'B' বাটনটি ৫ সেকেন্ড চেপে ধরে মিটারটি চ...

ছবি আঁকার সুপ্ত প্রতিভা

Image
দুষ্কৃতকারী চক্র আমার বিকাশ একাউন্টটি ডিজেবল করে দিয়েছিল। একাউন্টটি এক্টিভেট জন্য কল্যানপুর মিজান টাওয়ারের দোতলায় বিকাশ পয়েন্টে গেছি। প্রতিদিন যে সার্ভিসের মাধ্যমে কোটিকোটি টাকা লেনদেন হয়, বিকাশের সেই কাস্টমার সার্ভিস ব্যবস্থার এতো বাজে অবস্থা, না গেলে জানতাম না। সার্ভিস পয়েন্টে নাই এয়ারকুলার, নাই সিরিয়ালের জন্য টোকেন সিস্টেম। মান্ধাতা আমলের হাজিরা খাতায় নাম লেখা দিলাম। হাজিরা খাতায় নাম ধরে ডেকে ডেকে সার্ভিস দিতেছে। ভিতরে প্রচন্ড গরমে থাকতে না পেরে বাহিরে এসে পাশের রেস্টুরেন্টে বসে অনেক ক্ষণ এসির বাতাস খেলাম। তারপর গিয়ে দেখি, সিরিয়াল অনুসারে নাম ডাকা বন্ধ করে দিয়ে, যাদের সিরিয়াল ওভারটেক হয়েছে তাদের নাম ডাকা শুরু করে দিয়েছে। আমি বাঁধা দিয়ে বললাম, 'আপনি সিরিয়াল অনুসারে ডাকুন, যারা বাদ পড়েছে তাদের সার্ভিস শেষে দিবেন।' আমার প্রতিবাদে কাজ হয়েছে। সিরিয়াল অনুসারে ডাকতে শুরু করে। ৬৩ নাম্বারের শেষে ৬৪,৬৫,৬৬ কেউ উপস্থিত নাই। আমার ৬৭ নাম্বার সিরিয়াল। যাক, এতোক্ষণে বাঁচা গেলো। ভ্যাপসা গরমে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। আমার অভিযোগ শুনে কাস্টমার সার্ভিস থেকে বলল, 'বিকাশ কারো এ...

বন্ধুর টাকার শ্রাদ্ধ

Image
জীবনে বন্ধুর প্রয়োজন আছে, তবে অকৃতজ্ঞ বন্ধু না। বন্ধু ছাড়া জীবন লবণ ছাড়া তরকারির মতন পানসে। তাই জীবনের একটু স্বাদের জন্য ঢাকা থেকে বাড়িতে এলে চেষ্টা করি, সব বেসিক্যাল বন্ধুদের সাথে দেখা করার। তবে সময়ের অভাবে সবার সঙ্গে দেখা করা সম্ভবও হয়না। গতকাল কিছুটা ব্যস্ত ছিলাম বটে, তবুও রাতে শহরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেছিলাম। সেইসময় আমার ছোটবেলার কিছু ফ্রেন্ডস আমার সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য ফোন দিলো। বললাম, শহরের অমুক জায়গায় আছি। চলে আয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা চলে এলো। আরও একটা ফেন্ড আসবে। ওর আসতে দেরি হওয়ায় বললাম, তোরা কিছুটা সময় অপেক্ষা কর। ও আসলেই একসাথে বসে আড্ডা দিবো। আমি রেস্টুরেন্টে আগের বন্ধুদের সাথে খাওয়াদাওয়া করে তাড়াতাড়ি বিদায় নিলাম। তারপর ওদের ফোন দিলাম। ওরা আরেকটি রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি ওদের নিয়ে সেই রেস্টুরেন্টে গেলাম। মাত্রই খেয়েছি তাই আমি আর খেলাম না। ওরা ওদের পছন্দমতো অর্ডার দিলো। খাওয়া শেষে আমি বিল পরিশোধ করে ফেলেছি। সবাই উঠে দাঁড়িয়েছে, তারপরও একবন্ধু বলে আরেকটা শিক খায়। যদিও একেকজন ডাবল শিক কাবাব খেয়েছে। আমি আবারও শিক কাবাব অর্ডার দিলাম। অবাক বিষয়...

কাঙ্গালি ভোজ

রাতে হঠাৎ নুরা পাগলা আমার বাসায় এসে হাজির। ওকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, -তুই! এতো রাতে? কাঁদোকাঁদো গলায় নুরা পাগলা বলল, -মহা বিপদে পড়ছি, গুরু। আমারে উদ্ধার করেন। -কি হয়েছে তোর? -সে এক মহা সমস্যা... -আরে, খুলে বল -গুরু, পেটে সমস্যা -কি, ডাইরিয়া হয়েছে? -গুরু, সেটা হলে ত বাঁচতাম -তাহলে, কি হয়েছে?  -গুরু, বদহজম হয়েছে। আপ-ডাউন কিচ্ছুই হচ্ছে না -মানে? -হাগু হচ্ছে না, আবার বমিও হচ্ছে না -কি বলিস! তা খেয়েছিস কী? -কাঙ্গালি ভোজ মনে পড়ে গেলো, আজ ১৫ই আগষ্ট শোক দিবস। এইদিনে চারিদিকে শোকের বিরিয়ানির উৎসব চলে। নিশ্চয়ই নুরা পাগলা শোকের বিরিয়ানি খেয়েছে। সে সারাবছর পঁচা-বাসি আর পান্তা খায়। পেট ওটাতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আজ বিরিয়ানী খেয়েছে, সেটা পেট কাউন্ট করতে পারছে না। আর সেজন্যই হয়তো পেট কোন আউটপুট দিচ্ছে না। আমি নুরা পাগলাকে আশ্বস্ত করে বললাম, -শোন, মানুষের যেখানে ডাল ভাত জোটে না। সেখানে তুই বিরিয়ানী খেয়েছিস! ভালো। সারাবছর পর একদিন ভালমন্দ খেলে যা হয়, তোর তাই হয়েছে। মানে, বদহজম। -এজন্যি ত, আপনার কাছে আইছি। আপনে টেটমেন্ট দ্যান। -আমি ট্রিটমেন্ট কিভাবে দিবো। আমি কি ডাক্তার?...

রান্নাবাড়া

Image
ওষুধ ছিটালে উত্তরের মশা দক্ষিণে যায়, আর দক্ষিণের মশা উত্তরে যায়! তেমনই আমিও দৌড়ের উপর আছি। ব্যস্ততা এতোটাই, প্রিয়া সাহার গুম হওয়া সংখ্যালঘু সংখ্যার চেয়েও বেশি হবে। 'ডেঙ্গু ছেলেধরার মতো গুজব’ বলে সিডি চালিয়ে মেয়র সাব বসে থাকলেও আমার একমুহূর্ত বসে থাকার অবসর নাই। ডেঙ্গুর প্রকোপে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রুগীর উপচে পড়া চাপে হিমশিম খাচ্ছে। সেইসাথে রোগ নির্ণয়ের প্রতিষ্ঠানে কাজের চাপ বাড়ছে প্রচন্ডরকমের। গত সপ্তাহ থেকে সকাল ৯টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত একটানা অফিস করছি। রাত দুটায়/আড়াইটায় বাসায় ফিরতেছি। এইটা আমার পক্ষে কেমনে সম্ভব হচ্ছে, জানিনা। তবে মানুষের সেবায় নিয়জিত আছি, এটাই বড় কথা। এদিকে বাসায় গিন্নী নাই। গ্যাস্টিকের কারণে হোটেলের খাবার খেতে পারিনা। গিন্নীর রান্না করে দেওয়া ফ্রিজের খাবারও শেষ। তাই ব্যাচেলরের মত ডিম আনি, ডিম খাচ্ছি। ম্যানেজার স্যারকে বললাম, 'স্যার, গিন্নী না থাকায় খাওয়াদাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে।' স্যার আমার ও আমার সহকারীর জন্য অনুরাগের চিকেন বিরিয়ানির ব্যবস্থা করলো। আয়োজনটা একদিনের জন্য হলো, তারপর আর কোন আওয়াজ নাই। আমিও সাইলেন্ট মুডে গিয়ে ধুমসে ...

নুরা পাগলা যখন ছিনতাইকারী

Image
অফিস থেকে রাতে বাসায় ফিরছিলাম। ল্যাম্পপোস্টের স্বল্প আলোতে তাকিয়ে দেখি, নুরা পাগলা এক লোকের মাথায় পিস্তল তাক করে বলছে, -আমি ছিনতাইকারী নুরা মাস্তান। তাই বলে আতঙ্কিত হবেন না। নিজের ওপর আস্থা রাখুন। বড় বড় শ্বাস নিন। ধীরে ধীরে আপনার মূল্যবান জিনিসগুলা আমার সামনে বাহির করুন। ভদ্রলোকটি প্রাণের ভয়ে দ্রুত মোবাইল ও মানিব্যাগ বের করে নুরা পাগলার সামনে ধরলো। নুরা পাগলা মোবাইলটা হাতে নিয়ে গোয়েন্দাদের মতো নেড়েচেড়ে বলল, -ক্যামেরা কত মেগাপিক্সেল? লোকটি ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল, -ফ..ন্টে আট, ব্যা..কে তেরো মেগা..পিক্সেল নুরা পাগলা মোবাইলটা নাড়াচাড়া করতে করতে  বলল,  -শোনেন, ডেইলি যত এক্সিডেন্ট হয়। তার অর্ধেকই এই ফোনের কারনে। তাই ফোনটা রেখে দিলাম। লোকটি কোন প্রতিক্রিয়া নাই। নুরা পাগলা তার মানিব্যাগটা পরখ করে বলল, -মানিব্যাগ এত মোটা ক্যান? ভিজিটিং কার্ড দিয়ে ভরে রাখছেন, দেখছি। মোটা মানিব্যাগ পিছে রাখলে ব্যাকসাইডে প্রব্লেম হয়, বুজছেন? এবার লোকটি উত্তর দিল,   -বু..ঝছি নুরা পাগলা পরামর্শ দিয়ে বলল,   -কার্ড রাখার জন্য কার্ডহোল্ডার পাওয়া যায়। কিনে নিয়েন।...